রাজশাহী প্রতিনিধি,নরসিংদী জার্নাল: রাজশাহীর শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা হাসান আল শাদী পলাশ কৃষিভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন । দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ১৩ বিঘা আয়তনের আমবাগানে গড়ে তুলেছেন “ড্রিমার্স গার্ডেন” নামে এক ফুল-ফলের রাজ্য। যেখানে দর্শনার্থীরা ৫০ টাকার টিকিট কেটে ইচ্ছামতো আম-লিচু খাওয়ার সুযোগ পাবেন।

তাঁর এই বাগান সাজানো হয়েছে ফুলে ফুলে। নিয়মিত দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই আছে। সেখানে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ আম ও ৩০ টির মতো লিচুগাছ। চারদিকে বাগানে শুধু রঙের ছাড়াছড়ি। ১৬ জাতের ফুলগাছ দিয়ে থরে থরে সাজানো বাগানে রয়েছে শীতপ্রধান দেশের টিউলিপ, গেজিনিয়া, মেলোসিয়া, ড্রপ চন্দ্রমল্লিকা, পেনজি গ্লাডিওলাস, পাঁচ ধরনের ইনকা গাঁদা, ছয় রঙের টিউলিপ, পিটুনিয়া, হাইব্রিড নয়নতারা, ভারবিনা, সালভিয়া ইত্যাদি দৃষ্টিনন্দন ফুলের সমারোহ।

বাগানটির অবস্থান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামে । সেখানে যেতে হলে শহর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে যেতে হবে। প্রায় দেড় যুগ আগের গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া ও লকনা আমগাছ মৌসুম ছাড়া কোন কাজে আসে না ফলে হাসান আল শাদী নতুন চিন্তা করলেন! ভাবলেন, বাগানে আম গাছগুলোর ফাঁকা স্থান কোন কাজে আনা যায় কিনা? সেই চিন্তা থেকেই শুরু করলেন ফুলের চাষ। চলতি মৌসুমে চাষ করেছিলেন টিউলিপ যা দেখতে হাজারো দর্শনার্থী ভিড় জমায় ড্রিমার্স গার্ডেনে ।

এই যুবকের বাড়ি চাঁপাইনাবগঞ্জ সদরে । শিক্ষাগত যোগ্যতা আইনে স্নাতকোত্তর। কথা বলে জানা যায়, তাঁর এক আত্মীয়ের বাগান এটি। আমে বাগানে গত মৌসুমে ব্যাগিং করেছিলেন । ভালো দামে বিক্রি হওয়ায় লাভবানও হয়েছেন। তারপর চিন্তার প্রসার ঘটাতে লাগলেন। ফল হিসেবে গত অক্টোবর মাস থেকে বাগানে শুরু করেছেন ফুলের চাষ।

এখন ফুলের মেলা বাগানজুড়ে । গাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে প্যাঁচানো বাহারি বিভিন্ন ফুলের টব। বিভিন্ন কর্নার বাগানে দর্শনার্থীদের একান্তে সময় কাটানোর জন্য করা হয়েছে ,একটি লাইব্রেরি করারও চিন্তা করেছেন । যাতে নিরিবিলি বসে মনের খোরাক যোগাতে পারেন। এদিকে বাগানের এক কোনে রয়েছে একটি পুকুর।

বাগানের পুকুরে ভাসছে ফুলের নৌকা। এরপর আসছে আমের মৌসুম। গাছে পাকা আম দেখার একটা আনন্দ আছে। ইচ্ছেমতো দর্শনার্থীরা পাকা আম পেড়ে খেতে পারবেন, নিতে পারবেন। ইচ্ছামতো আম-লিচু খাওয়ার সুযোগ দিতে চান তিনি। শিশুদের দৌড়ঝাঁপ করার যে শৈশবের চিত্র তা দেখতে চান এই তরুণ উদ্যোক্তা। আর মনের এই আনন্দের জন্যই এতকিছু!

হাসান আল শাদী বলেন, “ আমরা ইট পাথরের দেয়ালে আটকা পড়ছি দিনদিন। আমাদের শিশুরা বইয়ের মলাটে রুদ্ধশ্বাস। হাফছেড়ে বাঁচার জন্য তাদের খেলাধুলা করা প্রয়োজন। আমার এখানে পরিবারসহ লোকজন আসবে, স্বামী-স্ত্রী বসে দুটো সময় কাটাবে এটাই আমি চাই। মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি আনতে চাই। শরীর-মন দুটোই সুস্থ থাক।

পরিকল্পনা জানতে চাইলে হাসান আল সাদী বলেন, তাঁরা চান, ক্রেতারা বাগানে আসবেন, গাছে পাকা আম দেখবেন, নিজ হাতে পাড়বেন, খাবেন, কিনে নিয়ে যাবেন। এখন টমেটো ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। তাঁদের গাছে টমেটো থাকবে। দর্শনার্থীরা আসবেন। নিজ হাতে গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলবেন, নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করছি, যার মাধ্যমে আমরা এখানে কৃষিভিত্তিক পর্যটন স্বপ্ন দেখছি।’

বাগানে টিউলিপ দেখতে ছুটে এসেছেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী বদরুদ্দোজা। বাগান দেখে অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি। বদরুদ্দোজা বলেন, “আমি কখনো এতো ফুল একসাথে দেখিনি। আর ৫০ টাকার টিকিট কেটে আমের মৌসুমে আম আর লিচু খাওয়ার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এই প্রথম। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ।”

বাগানে ঘুরতে আসেন দুইবোন বিপাশা খাতুন ও তামান্না আক্তার। রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন,“কন্দের মাধ্যমে টিউলিপ ফুল বংশবিস্তার করে। ফুলগুলো বিভিন্ন রঙের হয়। বেশ আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রতিটি গাছ ও ফুল দামী।

এখান থেকে একটা গাছ কিনতে চাইলাম কিন্ত বিক্রি করলেন না। হাজার টাকা দাম পড়তে পারে।”
আমবাগানে নতুন এই চিন্তার প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করেছেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাঃ উম্মে ছালমা নিজে বাগান পরিদর্শন করে জানান, “রাজশাহীর হাসান আল শাদী পলাশ নামে এক যুবক আমবাগানে টিউলিপ চাষ করেছেন।

তিনি কৃষিভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে চান। টিউলিপ শীতপ্রধান দেশের ফুল হলেও ঢাকার সাভার, যশোরের গদখালিসহ বিভিন্ন জায়গায় চাষ হচ্ছে। সরকার থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা আসলে নিশ্চয় চাষিরা পাবে।