শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০১:৫৩ অপরাহ্ন

হৃদয়বিদারকঃ শেষমেষ ছেলের গরুর গোয়াল ঘরে মায়ের বসবাস! বিস্তারিত ভিতরে…

রাব্বি মল্লিক, নরসিংদী খবর / ২২০ বার
আপডেট : বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২

স্বামী ছেড়ে গেছেন প্রায় ছয় বছর আগে। এরপর দুই ছেলে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন মহেছেনা। ৫/৬ মাস আগে বড় ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র।

সাথে নিজের করা ঘরটা ভেঙে নিয়ে গেলেও নিজের প্রথম পক্ষের ছেলেকে রেখে যান মা মহেছেনার কাছে। গৃহহীন মহেছেনার আশ্রয় হয় ছোট ছেলের গোয়াল ঘরে, গরুর সঙ্গে।

এই তীব্র শীতেও দশ বছর বয়সী নাতিসহ গরুর সঙ্গে একই ঘরে বসবাস করছেন ষাটোর্ধ্ব মহেছেনা। মহেছেনার বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের সুরিরডারা গ্রামে।

ওই গ্রামের ইমান আলীর স্ত্রী তিনি। তবে স্বামী চলে যাওয়ার পর অসহায় জীবনযাপন করছেন এই ষাটোর্ধ নারী। মহেছেনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,

গোয়াল ঘরের একদিকে একটি মাঁচান আর একদিকে শোবার বিছানা। মাঝখানের কোনায় গরু রাখার স্থান। গোবর-মূত্রের গন্ধ নিয়ে সেই ঘরেই বসবাস করছেন তিনি।

যেন নিজ ভূমিতে পরবাসী মহেছেনা। ছোট ছেলে বাড়িতে থাকলেও স্বল্প আয়ের কারণে মায়ের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করে দেওয়ার ‘সামর্থ্য’ নেই তার। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ছেলের গোয়াল ঘরে আশ্রয় হয়েছে তার।

মহেছেনা বলেন,‘ বড় বেটা প্রথম বউ ছাড়ি দিয়া ফির বিয়া করি অন্যটেই থাকে। নাতিটাক মোর কাছত রাখি গেইছে। ছোট বেটা দিন আনি দিন খায়।

মোক ঘর করি দেয় কাই? নাতিটাক নিয়া ছোট বেটার গৈইলত (গোয়ালে) থাকঙ।’ গো-মূত্রের সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হয় কিন্তু কী করমো বাবা, ঘর করার তো সামর্থ্য নাই!’

অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজের ও নাতির খাবার জোগান মহেছেনা। নিজের বয়স কত সেটাও ঠিকমতো বলতে পারেন না। তবে গোয়াল ঘরে থাকা নিয়ে তার ছোট ছেলের প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই। বরং ছেলের জন্য অনেকটা সাফাই গাইলেন এই নারী।

‘নাতিসহ যাওয়ার আর জায়গা নাই। মাইনষের বাড়িত কামাই করি আনি নাতিসহ খাঙ। ছোট বেটা নিজে চইলবার পায় না মোক কেমন করি দিবে। উয়ারও (ওরও) একটায় ঘর। কাইয়ো ঘরও দেয় না, সাহায্যও করে না।’

মহেছেনা যে বাড়িতে কাজ করেন সেই বাড়ির বড় ছেলে মারুফ আহমেদ মহেছেনা ও তার নাতির জন্য আলাদা ঘর করে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে সেজন্য সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মারুফ আহমেদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর এরই মধ্যে কয়েকজনের সাড়া পেয়েছি। আরও কিছু সহায়তা দরকার। সবার সহায়তা পেলে আগামী মাসেই মহেছেনা ও তার নাতির জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ খবর মিডিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। রাব্বি মল্লিক/এনজে

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ