ঠাকুরগাঁওয়ে জালিয়াতির মাধম্যে বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ১৮১ একর সরকারি জমি। সেই জমি ব্যক্তিমালিকানা ভেবে ক্রয় করে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মানুষ ও তাদের পরিবার।
অনেকে সেই সরকারি জমি বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকার মালিকও হয়ে গেছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুল্লির সবদল হাট নামক এলাকায়।
জানাগেছে, ১৯৮৪ সনের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটি পরিবারের খাস দখলে রাখা জমির সর্বোচ্চ পরিমাণ ২০ একর (৬০ বিঘা) করে নির্ধারণ করা হয় ।
এই অধ্যাদেশ ১৯৮৪ সনের ১৪ই এপ্রিল অর্থাৎ ১লা বৈশাখ হইতে কার্যকর হয়। সেই অনুযায়ী ২০০১ সালে সবদল হাট এলাকায় রেজানুল হক ইদু চৌধুরী, আফতাবউদ্দিন চৌধুরী ও মোফাজুল হক চৌধুরীর দখলে থাকা ১৮৫.৫ একর জমি সরকারের খাস খতিয়ান ভুক্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারের এই খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি কিছু জাল দলিলের সাহায্যে বিক্রয় শুরু করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম সিদ্দিক মুক্তি, মেম্বার আলমগীর হোসেন, জমি ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ, হাসেন আলী জামাল, রবিউল ইসলাম ও জয়নাল। সেই সাথে এই জমি বিক্রয় কার্যক্রমের সকল রকম কার্য সম্পাদন করেন মালেক মুহুরি ও তোহশিলদার মশিউর রহমান।
ক্ষতিগ্রস্ত কাশেম জানান, ক্রেতারা জানতেন জমি জালিয়াতি চক্রটি মূল মালিকের মাধম্যে ক্রয়সূত্রে এই সকল জমির লিগ্যাল মালিক। তবে এখন সকলেই জানতে পেরেছে, আসলে তারা ভুয়া দলিলে সরকারি খাস জমি কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ পুলিশের নামে রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরীর লিখে দেয়া ১ একর জমি কিছুদিন আগেই উদ্ধার হয়। সেই সময়েই ১৮৫.৫ একরের মধ্যে বেদখলে থাকা আশেপাশের প্রায় ১৮১.৫ একর খাস জমির সন্ধান মেলে। সেখানে গুচ্ছ গ্রামের মাধম্যে সরকারের দখলে আছে মাত্র ৪.৫ একর জমি। ইতোমধ্যে এই সকল বেদখলের জমি উদ্ধারের বিষয়ে কাজও করছে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন। ফলে জালিয়াতির শিকার হওয়া অনেক পরিবার নিঃশ্ব হবার অবস্থায় নেমেছে।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক রাজ্জাক বলেন, আমি কৃষিকাজ করে ৬ সদস্যের সংসার চালাই। সারাজীবন উপার্জনের সঞ্চয় থেকেই ২ বিঘা জমি কিনেছিলাম তৎকালিন ইউপি চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে। কিন্তু এখন জানতে পারলাম আমি ঠকেছি। এই জমিটুকু চলেগেলে আমি ভূমিহীন হয়ে যাবো। আমার পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কথা হয় অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তির সাথে। তিনি বলেন, আমি জমির মূল মালিক আফতাফউদ্দিনের কাছ থেকে জমি কিনেছিলাম। পরে এলাকার মানুষের কাছে বিক্রি করেছি। যদি কেউ জালিয়াতি করে তাহলে সেটা মূল মালিক করেছে। আমি কিছুই জানি না।
সাবেক চেয়ারম্যানের সুরেই নিজেদের দোষ জমির সাবেক মালিকদের ওপরে চাপিয়েছেন অন্যান্য অভিযুক্তরাও। তবে সাবেক মালিকের মধ্যে কেউ জীবিত না থাকায় আমরা কথা বলেছি তাদের উত্তরসূরিদের সাথে। উত্তরসূরিরা তাদের এসকল সব অভিযোগ অস্বীকার করে।
আজিজ নামে এক জমি দালাল জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল আমাকে জমির ক্রেতা খুঁজতে বলে। তাই আমি বিভিন্ন জনের কাছে জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এটি যে খাস জমি সেটা আমি জানতাম না।
অন্যান্য অভিযুক্তরা জয়নাল, হাসেন আলী, জামাল, রবি, মালেক মুহুরি ও তোহশিলদার মশিউর সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামশুজামান বলেন, সরকারি খাস জমি বিক্রি করার এখতিয়ার কারো নাই। যারা এই জমি বিক্রি ও দালালির সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি এসিল্যান্ড সদরকে অবগত করা হয়েছে। তিনি তদন্ত অনুযায়ী সরকারি জমি উদ্ধারের কাজ কবেন।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে খাসজমির বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। সেখানকার অবৈধ কেনাবেচার অভিযোগের বিষয়ে জানি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।