শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরেছে প্রাণের স্পন্দন। খুদে শিশুদের স্কুল খুলছে আগামী বুধবার। তবে এর আগেই যানজটে স্থবির তিলোত্তমা নগরী ঢাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল কলেজে পাঠদান শুরু হওয়ায় সবসময় লেগে আছে যানজট। আগামীকাল বুধবার প্রাথমিক স্কুলগুলো খুলছে। ফলে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার নেবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে বেলা ১২টায় দেখা যায় তীব্র যানজট। পাশেই উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও ভিকারুননিসার মতো বড় প্রতিষ্ঠান থাকায় সড়কে যানবহনের পাশাপাশি স্কুলশিক্ষার্থীদের আনাগোনায় এলাকাটি মানবসমুদ্রে রুপ নেয়।
সরেজমিনে রাজধানীর মতিঝিল, ধানমন্ডি এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে সকাল থেকেই ছোট-বড় গাড়ির সারি দেখা যায়। সড়কের পাশে পার্কিং ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে অলিগলিতে তৈরি হয় জগাখিচুড়ি অবস্থা।
গণপরিবহনে যাতায়াত করেন অবন্তিকা করিম। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে সপ্তাহে ৬ দিন বনানীতে সকাল সাড়ে নটায় অফিস ধরেন। এর জন্য তিনি রওনা দিতেন সাড়ে আটটায়। বাংলাদেশ জার্নালকে অবন্তিকা বলেন, স্কুল-কলেজ যে কদিন বন্ধ ছিলো নির্দিষ্ট সময়েই কর্মস্থলে পৌছাতাম। এখন গণপরিবহন বাদ দিয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে রওনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় অফিস পৌছাতে পারছি না। এতে খরচ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ভোগান্তি।
পেশায় সাংবাদিক আশরাফুল রানা বলেন, রাজধানী জুড়ে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্প ও সড়ক সংস্কার। একারণে রাস্তা যেমন সরু হয়েছে, তেমনি বেড়েছে সড়কে পরিবহনের সংখ্যা। এরফলে মানুষের কর্মঘণ্টা কমার পাশাপাশি বাড়ছে মানসিক চাপ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের অনেক কিছুই ডিজিটালাইজ হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ অনলাইনে মামলা দিচ্ছে। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সেই আগের মতই রয়ে গেছে। এখনো হাতের ইশারায় সড়কগুলোতে সব ধরণের বাহন চলছে।
সারাদেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। আর প্রাথমিকে আছেন প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও শিক্ষার্থী রয়েছে কয়েক লাখ। যার বড় একটি অংশ বসবাস করেন রাজধানী ঢাকায়। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মাজিদ জানান, রাজধানীতে সরকারি, বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১০০। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এই সংখ্যার বাইরে।
এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য বলছে, একটি আদর্শ মেগা সিটির আয়তনের তুলনায় সড়ক থাকতে হবে অন্তত ২৫ ভাগ। সেখানে ঢাকায় সড়ক রয়েছে মাত্র ৮ ভাগ। যা অনেকক্ষেত্রে অবৈধ ব্যবসায়ী দোকানদার থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের দখলে। এছাড়াও নগরীর ফুটপাতের অবস্থাও অত্যন্ত বেহাল। ৫ বছর আগে রাজধানীতে যান্ত্রিক গাড়ির গড় গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় সাত কি.মি। বর্তমানে এই গতি কমে দায়িয়েছে সাড়ে ৫ কি.মি.। এদিন খুব বেশি দূরে নয়, ঢাকায় একটি গাড়িতে উঠে গন্তব্যে পৌছানোর আগেই মানুষ হেটে পৌছাতে পারবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে যানজট ও শৃঙ্খলা ফেরাতে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম অনেক কম। পথচারীদের জন্য এখন পর্যন্ত ফুটপাত উন্মুক্ত নয়। এর উন্নতি প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট) সহকারী পরিচালক সাইফুন নেওয়াজ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুল, উত্তরা রাজউক স্কুলসহ বেশকিছু স্কুল আছে যারা অনেক যানজটের সৃষ্টি করে। এই ধরণের স্কুলগুলো যদি স্কুলবাসের সংখ্যা বিভিন্ন রুটে চালু করে তবে যানজট নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও সম্ভব। এছাড়াও গণপরিবহনের সংখ্যা ও মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।