সাহসী রুনা ও নাজমা রুখে দিলেন স’শস্ত্র ডা’কা’ত’দল
গৃহিনী রুমা বেগম। বাইরে থেকে বাসায় ঢুকতে তার তিন তলার পাশের ফ্লাটে চিৎকারের শব্দ পান। নিজের ঘরে না ঢুকে দৌড়ে যান সেখানে। দরজা ধাক্কা দিতেই ভেতরে দেখেন বাড়িওয়ালা শিরিন আক্তার ও তার দুই ছেলে মেয়ের মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে।
তখনই পাশ কাটিয়ে দুজন লোক নেমে যাচ্ছে। এ সময় শিরিন আক্তার চিৎকার দিয়ে বলেন, এরা ডাকাত। আমার বাসায় ডাকাতির করতে এসেছে। এটা শুনেই কোনো চিন্তা করেই দুই লোকের কাঁধে থাকা ব্যাগ টেনে ধরেন রুমা বেগম। এক মুহূর্তে ব্যাগ ফেলে নিচে নামতে থাকেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে রুমার স্বামীও আসেন। এ সময় তারা বের হতে চাইলে বাড়ির মূল গেট বাইরে তালা বদ্ধ করে দেওয়া হয়।
রুমা বেগম বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকেছে। তাদের সঙ্গে পিস্তল, চাপাতি, কসটিপ ও রশি ছিলো। প্রথমে কেউ কেউ আমাকে যেতে না করেছিল। কিন্তু আমি নিজের দায়িত্ব থেকেই দৌড়ে গেছি উপরে। যখন তাদের ব্যাগ ধরে টানাটানি করছিলাম, তখন ডিবি পরিচয় দিয়েছিলো। ব্যাগ ফেলে নিচে দৌড়ে যায় তারা।
এদিকে দ্বিতীয় তলার আরেক ভাড়াটিয়া নাজমা আক্তার। চিৎকার শুনে বাড়ির নিচের মুল কেচি গেট বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেন। এ সময় গেটের ভিতর থেকে পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করার ভয় দেখায় তারা। ভয় না পেয়ে অন্যদের সহযোগিতায় গেটে তালাবদ্ধ করে দেন তিনি। এরমধ্যে আশেপাশে লোকজন এসে তাদের ধরে ফেলে ও পুলিশে খবর দেয়।
গৃহিনী নাজমা আক্তার বলেন, প্রথম চিৎকার শুনে ভেবেছিলাম বাইরে কোনো সমস্যা । প্রথমে বাইরে গেলে দেখি বাড়িওয়ালার মেয়ে বারান্দা দিয়ে চিৎকার করে বলছিলো আন্টি নিচের গেটে তালা দেন। আমি দ্রুত আরেক প্রতিবেশী গৃহকর্ত্রী ও তার ছেলের সহযোগিতায় তালা দিতে গেলে ডাকাত ভেতর থেকেই আমার মাথায় পিস্তল ধরে।
আমাকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বের হতে চায় তারা। আমি বলেছি, আপনার লোক আসতে বলেন, তারপর পরিচয় ঠিক থাকলে ছেড়ে দিবো। এরমধ্যে বাড়ির বাইরে ও ভিতরে থাকা লোকজন সবাই এগিয়ে এসে তাদের ধরে ফেলে।
হামলা শিকার গৃহকর্ত্রী শিরিন আক্তার বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী পরিচয় দিয়ে ঢুকে আমাদের ঘরে লুটপাট চালায়। এ সময় বাধা দিলে চাপাতি নিচের অংশ দিয়ে আমাকে মাথায় আঘাত করে। আমার ছেলে ও মেয়কে মারধর করে। চিৎকার শুনে ভাড়াটিয়া ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। তারা আজকে পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই ডাকাতদের আটক করা গেছে। আমরাও বেঁচে গেছি। এভাবে যদি একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ায় তাহলে যেকোন অপরাধ রুখে দিতে পারবে মানুষ।
ঘটনাটি মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ায় পলাশবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে। এই বাড়িতে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী পরিচয়ে দিয়ে দিন দুপুরে একটি বাড়িতে ঢুকে ডাকাতির সময় হাতে নাতে দুই নারীর সহসিকতায় স্বসস্ত্র দুই অপরাধীকে আটক করেছে স্থানীয়রা।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল ও দেশিয় অস্ত্র পাওয়া যায়। তাদের গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করা হয়। এ ঘটনায় ডাকাতের হামলায় বাড়ির গৃহকর্ত্রী ও ছেলে মেয়েসহ তিনজন আহত হন।
এলাকার মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মোছলেম শেখের ‘শিরিন ভিলা’ নামের পাঁচতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রী শিরিন আক্তার ও ছেলে মেয়েসহ সেখানে বাস করেন।
আটককৃতরা হলেন- গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি থানার মাঙ্গড়া গ্রামের মো. রেজাউল মোল্লার ছেলে সজল মোল্লা (২১)। বর্তমানে জামগড়া বসবাস করছে। অপরজন লক্ষ্মীপুর জেলার হাজীপাড়া গ্রামের মৃত কাশেম মিয়া ছেলে মো. রহমান ওরফে সুমন (৩৭)। বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারে বসবাস করেন তিনি।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপরাশেন) আব্দুর রাশিদ বলেন, পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়। সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে। আজকে অপরাধীদের আটক করতে ভাড়াটিয়া ও প্রতিবেশীরা প্রসংশনীয় কাজ করেছে। বিশেষ নারীরাও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল