নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী খবর ||
মানুষের প্রকৃত সুখ ও শান্তি পরকালে। তাই পৃথিবীর সময়গুলো পরকালের সমৃদ্ধি অর্জনে কাটানো প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামেরও ধ্যান-জ্ঞান ছিল, কীভাবে পরকালের জীবন সুন্দর ও সমৃদ্ধ হয় সে সাধনায় ও প্রচেষ্টায়।
এ ব্যাপারে হাদিসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেনÑ১. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা। ২. দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া। ৩. ঘুমের আগে বিতরের নামাজ পড়া’ (বুখারি, হাদিস : ১১৭৮)। এ হাদিসে মহানবী (সা.) তিনটি বিশেষ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন।
যা থেকে নফল রোজা ও নামাজের গুরুত্ব বুঝে আসে। হাদিসবিশারদরা বলেন, যদিও এ হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.)-কে সম্বোধন করা হয়েছে, তবু তা উম্মতের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। সবার উচিত আমল তিনটির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতে বলেছেন। অন্য হাদিসে এসেছে, তিনি প্রতি মাসের মধ্যবর্তী তিন দিন রোজা রাখতেন। ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় যাকে ‘আইয়ামে বিজ’-এর রোজা বলা হয়। আরবি ক্যালেন্ডার হিসেবে চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখকেই আরবিতে ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়। বহু সাহাবি ও পূর্ববর্তী নেককার বান্দারা গুরুত্বের সঙ্গে এ তিন দিন রোজা রাখতেন। এ রোজার তাৎপর্য হলো, হাদিসে এসেছে, আল্লাহ ভালো কাজের প্রতিদান কমপক্ষে ১০ গুণ বৃদ্ধি করেন। সুতরাং কেউ তিন দিন রোজা রাখলে সে পুরো মাস তথা ৩০ দিন রোজা রাখার সমান সওয়াব লাভ করবে।
চাশতের নামাজ
চাশতের নামাজের প্রতি নবীজির নির্দেশনা ও ফজিলত আরও একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি গ্রন্থির বিপরীতে সদকা (দান) করা আবশ্যক। প্রতিটি তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সদকা, প্রতিটি তাহমিদ (আল হামদুলিল্লাহ) সদকা, প্রতিটি তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) প্রতিটি তাকবির (আল্লাহু আকবার) সদকা, সৎকাজের আদেশ সদকা ও অসৎকাজে নিষেধ সদকা। আর এসব চাশতের দুই রাকাত নামাজ পড়লেই আদায় হয়ে যায়’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২০)। ফকিহরা বলেন, চাশতের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত ও সর্বোচ্চ আট রাকাত। এ নামাজের তাৎপর্য হলো, ব্যক্তি যেন দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর দরবারে নফল নামাজের মাধ্যমে সাহায্য ও নৈকট্য প্রার্থনা করতে পারে। এ ছাড়া চাশতের নামাজ আল্লাহর দরবারে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় দিন শুরু করতে পারার কৃতজ্ঞতা আদায়। যেমনটি সহিহ মুসলিমের হাদিসে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিতরের নামাজ আদায়
এশার নামাজের পর ও ফজরের আগে তিন রাকাত বিতরের নামাজ পড়া ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) তা আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে মুকিম ও মুসাফির সর্বাবস্থায় আদায় করেছেন। এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত বিতর নামাজ আদায় করা যায়। উত্তম হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের পর তা আদায় করা। আলোচ্য হাদিসে ঘুমের আগে বিতরের নামাজ আদায়ের নির্দেশ তাদের জন্য, যাদের শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে না পারার ভয় আছে। আল্লাহ তায়ালা আমলের তওফিক দান করুন।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /নরসিংদী খবর