সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন

“মিথ্যার পাপ থেকে বিরত থাকার উপায়”

রিপু / ৬৫ বার
আপডেট : বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী খবর ||

মানবসভ্যতাকে কঠিন সংকটের মুখে ঠেলে দিতে পারে যে পাপ তার নাম মিথ্যা। কোনো সমাজে ব্যাপকভাবে মিথ্যার প্রবণতা থাকলে সেই সমাজ গোড়া থেকে ধসে পড়ে; এটা ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। এ জন্যই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যা অনেক পাপের পথ খুলে দেয়।

আর পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়’ (বোখারি : ৬০৯৪)। পৃথিবীর কোনো ধর্মেই মিথ্যার স্থান নেই। দল, মত, মতবাদ ও ধর্ম নির্বিশেষে মিথ্যা ঘৃণিত ও বর্জনীয়। কিন্তু তিক্ত হলেও বাস্তব, মিথ্যা এতটা জঘন্য হওয়ার পরও সমাজের সব পেশা ও শ্রেণির মানুষের মধ্যেই কমবেশি মিথ্যার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। জীবনে কখনো মিথ্যা বলেনি বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

মিথ্যার ব্যাপক ছড়াছড়ি দেখে কারো মনে হতে পারে, মিথ্যা মনে হয় মানুষের সৃষ্টিগত সমস্যা। না, মিথ্যা মানুষের সৃষ্টিগত সমস্যা না। কোনো শিশু যখন মাত্র কথা বলতে শেখে তখন সে কিন্তু মিথ্যা বলতে জানে না। সে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখতে জানে না। এ জন্য মানুষ শিশুদের সামনে অপরাধ করতে ভয় পায়।

শিশুমনে মিথ্যার প্রবণতা থাকে না। শিশু যখন সমাজের সাথে মিশে যায়, পঙ্কিল সমাজের হাওয়া যখন তার গায়ে লাগে তখনই তার মধ্যে মিথ্যার প্রবণতা দেখা দেয়। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কারণেই মূলত শিশুরা মিথ্যা বলতে শেখে। প্রত্যেক বাবা-মা-ই চান তাদের সন্তান মিথ্যা থেকে দূরে থাকুক। কিন্তু বেশির ভাগ অভিভাবক বুঝতেই পারেন না, তাদের সঠিক দীক্ষার অভাবেই হয়তো সন্তান মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। সচেতন অভিভাবকদের জন্য এ বিষয়ে জানা থাকা জরুরি। অভিভাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে, মিথ্যার ক্ষতি ও ভয়াবহতা সম্পর্কে শিশুকে শিক্ষা দেয়া। মিথ্যা বলা মহাপাপ, মিথ্যা জঘন্য খারাপ কাজ, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় এ ধারণা শিশুর মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া। শিশুর কাছে মিথ্যাকে ভয়াবহ রূপে উপস্থাপন করা। কোনোভাবেই মিথ্যাকে প্রশ্রয় না দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত মিথ্যার ক্ষতি ও শাস্তি সম্পর্কে তাকে অবহিত করা।

মিথ্যার কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে শিশুকে কোন কৌশল প্রয়োগ করলে মিথ্যা থেকে দূরে থাকবে তা জানা সহজ হবে। যেমন-যদি মিথ্যা বলার কারণ হয় শাস্তির ভয়, তাহলে আমরা তাকে শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকব। তাকে ভিন্নভাবে শাসন করব। তার সাথে এমন আচরণ করব যেন সে নিরাপত্তা অনুভব করে। সাথে সাথে তাকে অন্যায়ের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করব। যাতে সে নিজে থেকেই অন্যায় থেকে বেরিয়ে আসে। আর যদি সে অন্য শিশুকে ছোট করা বা অপমানিত করার জন্য মিথ্যা বলে থাকে তাহলে আমরা তাকে ন্যায় ও ইনসাফের গুরুত্ব, সামাজিক সম্মানবোধের প্রয়োজনীয়তা এবং পারস্পরিক ভালোবাসার আবশ্যকতা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করব।

কোনো শিশু যখন মিথ্যা বলে তখন তাকে অন্যদের সামনে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা যাবে না। কারণ, এতে তার আত্মমর্যাদাবোধ জেগে ওঠে এবং সে জেদি হয়ে ওঠে আরো বেশি মিথ্যা বলতে থাকে। বরং তার সামনে সমবয়সি কোনো শিশুর সত্য বলার কারণে প্রশংসা করতে হবে এবং তার থেকে যেসব সত্য কথা প্রকাশ পেয়েছে তা উল্লেখ করে উৎসাহ দিতে হবে। আর যখন শিশু থেকে কোনো মিথ্যা প্রকাশ পেয়ে যাবে তখন তাকে এমনভাবে সম্বোধন করতে হবে, যেন সে বোঝে যে, সে আসলে সবসময় সত্যই বলে। হঠাৎ একটা মিথ্যা ভুলে বলে ফেলছে এবং সামনে এমন হবে না।
সন্তানের সাথে মিথ্যা বলা, ছল-চাতুরী ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকেত হবে। অনেক বাবা- মা এ বিষয়টাকে খুব হালকা মনে করেন। সন্তানকে বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করেন। অনেক অবাস্তব কথা বলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এতে স্থায়ীভাবে সন্তানের স্বভাবের মধ্যে মিথ্যার প্রবণতা ঢুকে যায়। মিথ্যা কথা বলতে ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে তার বিবেকে বাধে না। আমরা আগেও উল্লেখ করেছি, সন্তানের সাথে ছল-চাতুরী ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন।

পরিবারের সব সদস্যকে মিথ্যা পরিহার করতে হবে। পরিবারের বড়রা মিথ্যা থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। অন্যথায় কোনোভাবেই শিশুকে মিথ্যা থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ, শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দেরকে যা করতে দেখে তারাও তাই করে। অনেক পরিবারেই বড় ভাই-বোনের মধ্যে এমনকি বাবা-মায়ের মধ্যেও মিথ্যার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এটা দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর মধ্যে খারাপ প্রভাব ফেলে।

শিশুর কাছে মিথ্যা হালকা হয়ে যাওয়া ছাড়াও বড়দের প্রভাব তার ওপর কমে যায়। অভিভাবকের ব্যক্তিত্ব তার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তাই আসুন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মিথ্যা থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে আগে নিজেরা মিথ্যা থেকে বাঁচি। সন্তানকে তরবিয়ত করার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের ছল-চাতুরী ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকি। তাদের জীবনকে সুন্দর করে গড়তে সাহায্য করি। ইসলামী বিধান অনুযায়ী সন্তানকে প্রতিপালন করে আল্লাহর দেয়া আমানতের যথাযথ মূল্যায়ন করি এবং নিজের দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর করি। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ   রিপু /নরসিংদী খবর

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ