জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, নরসিংদী জার্নাল।। ‘মা তো চাঁদ হয়ে গেছে, আর কথা বলে না’
তিন বছর আগে আজকের দিনে রাজধানীর বাড্ডায় প্রাইমারি স্কুল গেটে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনীতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। মাকে হারিয়ে ছেলে মাহির অনেকটাই নীরব হয়ে গেছে। এখন আগের মতো দুষ্টুমি করে না। আর মেয়ে তুবাকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে আগে বলতো, মা বিদেশে গেছে। মা ফোন করে না, কথা বলে না। আর এখন বলে, মা আকাশের চাঁদ হয়ে গেছে।
মাহির এখন উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে হোস্টেলেই থাকে। আর তুবা মহাখালী শিশুমেলা স্কুলে প্রথম শ্রেণিতের পড়ে। সে বড় হচ্ছে খালা নাজমুন নাহার নাজমার কাছে।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য খোঁজখবর নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।
২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন।
ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফাতিমা ইমরোজের আদালতে ১৩ আসামির বিচার শুরু হয়েছে। আর দুই শিশু আসামির বিচার চলছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ।
মামলার বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, তিন বছর হয়ে গেলো খালাকে হারিয়েছে। বিচার এখনও শেষ হয়নি। তবে বিচারক মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন।
তুবা ও মাহির বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, মাহির মাইলস্টোনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। আর তুবা প্রথম শ্রেণিতে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে ওদের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ভবিষ্যতে কী দিয়ে যেতে পারবো তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। কী হবে ওদের ভবিষ্যৎ। সরকার যদি ওদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ওদের ভবিষ্যৎ কিছুটা হলেও ভালো হবে। আমরা চাই, সরকার যেন ওই এতিম দুই শিশুর কোনো একটা ব্যবস্থা করে।
তিনি বলেন, মানসিক আঘাতের কারণে মাহির নীরব হয়ে গেছে। সারাক্ষণ কী যেন ভাবে। আর তুবাকে কেউ মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, মা আকাশের চাঁদ হয়ে গেছে। চাঁদ কি কথা বলতে পারে। এ কারণে আমাকে ফোন দেয় না, খবর নেয় না। আমরা এখনও সবাই একটা ট্রমার মধ্যে আছি। কেউ ঘুমাতে পারি না। বিচারটা শেষ হলে কিছুটা শান্তি পেতাম।
তুবার খালা নাজমুন নাহার নাজমা বলেন, মাহির ওর মায়ের মৃ’ত্যুর নির্মম দৃশ্য তো নিজ চোখে দেখেছে। সে খুব নিরব থাকে। আর তুবার বয়স এখন সাত বছর। সেও এখন কিছুটা বুঝতে পারে।
তিনি বলেন, দুই বাচ্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। ওদের মা থাকলে তো এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হতো না। রেনুর তো ডিসেম্বর ইউএসএ চলে যাওয়ার কথা ছিল। এভাবে আমার বোনটা চলে গেলো। সেই সঙ্গে ওর দুই বাচ্চার জীবনও অনিশ্চিত।
যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন আমিই ওদের দেখবো। সরকার যদি কোনো একটা ব্যবস্থা করতো তাহলে কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত হতাম। মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় এবং বোনের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা হয়।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল