বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন

বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক মিনিট পরেই অন্তঃসত্ত্বা নারীর আ’ত্মহ’ত্যা

প্রতিনিধির নাম / ১৩৪ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২

ছবি সংগ্রহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জোরপূর্বক বিবাহ বিচ্ছেদে বাধ্য করার কয়েক মিনিট পরেই আত্মহত্যা করেছে এক নারী৷ সোমবার (৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ সমিজা খাতুন (১৮) ইসলামপুর উত্তরপাড়া গ্রামের হযরত আলীর মেয়ে। নিহত সমিজা খাতুন দেড় মাসের প্রসূতি ছিল বলে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার দিকে নিজ কক্ষে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় দেখতে পায় তার পরিবার। পরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

জানা যায়, বছরখানেক আগে সদর উপজেলার দেবিনগর গ্রামে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সমিজা খাতুনের। প্রায় ৬ মাস পর মোবাইলফোনে পরকীয়ার জড়িয়ে পড়ে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের

বাখেরআলী চৌধুরীপাড়া গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে আশিক আলীর (২৫) সাথে। এনিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের পর গত ০৫ মাস আগে বাড়িতে না জানিয়ে আশিকের সাথে পালিয়ে যায় সমিজা খাতুন। পরে দুই পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করে তারা৷

নিহত সমিজা খাতুনের বাবা হযরত আলী বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করলেও আমরা তাদের বিয়ে মেনে নেয়। এরপর থেকে জামাই আমাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করত৷ কিন্তু আমার মেয়েকে জামাইয়ের পরিবার মেনে না নেয়ার কারনে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়নি।

ছেলের পরিবার গত রবিবার বিবাহ বিচ্ছেদ করতে আমাদের বাড়িতে লোকজন পাঠায়। গতকাল সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি গলিতে দুই পরিবার ও ইসলামপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম পিকুল মেম্বারের উপস্থিতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে ভালোবেসে আশিককে পালিয়ে বিয়ে করেছিল। আমরা মেনে নিলেও ছেলের পরিবার কখনও মেনে নেয়নি। আমার মেয়ে কখনও বিচ্ছেদ চায়নি। ছেলের পরিবারের চাপে বাধ্য হয়েই জোরপূর্বক তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়েছে।

সমিজা খাতুনের মা জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক মিনিট পরেই ঘরে ঢুকতেই দেখি গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে সমিজা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার আগেই সে মারা যায়। ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর থাকলেও আমার মেয়েকে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এনিয়েও তার ভীষণ মন খারাপ ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, অটো মেকার আশিকের সাথে প্রেমের কারনে পারিবারিকভাবে হওয়া স্বামীকে ছেড়ে এসেছিল সমিজা। পরে নিজের পরিবারকে না জানিয়ে আশিকের সাথে বিয়ে করার ৫ মাসেও শশুরবাড়ি যেতে পারেনি। যেই ছেলের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করল, সেই তাকে ছেড়ে দিল। এই কারনে ক্ষোভে সমিজা আত্নহত্যা করেছে।

এনিয়ে কথা বলতে ইসলামপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম পিকুল মেম্বারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম ছবি জানান, মেয়ের অমতে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনার কয়েক মিনিট পরই মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি।

ঘটনার পর থেকে ছেলের পরিবার বাড়িতে তালা মেরে পলাতক রয়েছে। এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এনিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন
সূত্র বিডি২৪লাইভ

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ