প্রেমিককে খুঁজতে গিয়ে ধ’র্ষ’ণের শিকার, বাসায় ফিরে আ’ত্মহ’ত্যা
প্রেমিক জিসানকে খুঁজতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন দশম শ্রেণীর ছাত্রী সমিয়া আফরিন মৌ (১৫)। কিন্তু তার প্রেমিক দেখা করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফেরার পথে রুবেল নামে এক টমটম চালক তার পুরো কাহিনী শুনে জিসান তার পূর্ব পরিচিত বলে জানায়।
এক পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে কালক্ষেপণ করে । এরপর একটি আবাসিক হোটেলে তুলে দেয়। সেখানে ভয়-ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর মৌ বাসায় ফিরে রাগে ক্ষোভে আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যার আগে মৌ একটি চিরকুট লিখে ছিল। সেই চিরকুট ও তার বান্ধবীর সূত্র ধরে ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেফতাররা হলেন- রুবেল (১৯) ও জিসানুল ইসলাম (২০)। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি জানান, সামিহা আফরিন মৌ (১৫) এর বন্ধু জিসান চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় ফুলকলি মিষ্টির কারখানায় কাজ করতো। তার সাথে ফেসবুকে পরিচয়ের সুবাদে ১ বছর ধরে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরে জিসানুল ইসলাম আরো বেশি বেতনে কক্সবাজারে চাকরি পাওয়ায় সে বায়েজিদ বোস্তামি এলাকা থেকে নতুন কর্মস্থলে চলে যায়। তাদের সাথে মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগের এক পর্যায়ে বন্ধু জিসানুলের আমন্ত্রণে গত ৩১ মে মৌ তার বান্ধবী মাহমুদা মুক্তা (১৫)কে সাথে নিয়ে কক্সবাজার যায়।
সেখানে গিয়ে মৌ তার বন্ধু জিসানুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে ব্যস্ত আছে বিধায় দেখা করতে পারবে না বলে জানায়। পরে জিসান তার তিনজন বন্ধুকে মৌ এর কাছে পাঠিয়ে দেখা করতে অস্বীকৃতির কথা জানায় এবং তাদেরকে চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার জন্য বলে। তখন মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত মৌ (১৫) ও তার বান্ধবী মুক্তা (১৫) একটি টমটম নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যায় চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য।
টমটম চালক রুবেল (১৯) মৌয়ের কাছে থেকে ঘটনা জানার পর মৌকে আশ্বস্ত করে যে, জিসান তার পূর্ব পরিচিত। তাকে সময় দিলে সে যেভাবেই হোক জিসানের সাথে মৌয়ের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিবে। টমটম চালক রুবেলের কথায় আশ্বস্ত হয়ে মৌ সরলমনে তা বিশ্বাস করে। রুবেল মৌয়ের বান্ধবী মুক্তাকে তখন একটি চট্টগ্রামগামী বাসে তুলে দেয়।
এর পরের ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, রুবেল জিসানকে খুঁজে বের করার অভিনয় করে মৌকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কালক্ষেপণ করে। এক পর্যায়ে সে জানায়, জিসানকে খবর দেয়া হয়েছে। রাতে ৬ নং ঘাটের পার্শ্ববর্তী ‘হোটেল আলামিন’-এ এসে মৌয়ের সাথে দেখা করবে মর্মে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে উক্ত হোটেলে রুম নেয়।
রাতে জিসান এসেছে বলে মৌকে হোটেল রুমের দরজা খুলতে বলে। তখন রুবেল উক্ত হোটেল রুমে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে কৌশলে পালিয়ে যায়। মৌ নিরুপায় হয়ে ১ জুন রাতে চট্টগ্রামস্থ বায়েজিদ বোস্তামিতে তাদের বাসায় ফিরে আসে।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মৌ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অভিমানে ৩ জুন ভোরে নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।এ ঘটনায় মৌ এর বাদী হয়ে রুবেল ও জিসানুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেই মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল