সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি নির্মাণ

প্রতিনিধির নাম / ২০৬ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২

ছবি সংগ্রহীত
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানের (বাবুল) বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলাও চলমান।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শৈলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ নিজের দাবি করে প্রধান শিক্ষক সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। বাড়িটি নির্মিত হলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলার পরিবেশ নষ্ট হবে।

এ ছাড়া তাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্যও কোনো রাস্তা থাকবে না। দ্রুত বাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ করে শিশুদের খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানানো হয় অভিযোগে।
সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা।

পশ্চিম দিকে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝখানে শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ। মাঠের মাঝের অংশে সিসি ঢালাই দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন মাহাবুবার রহমান। আটটি পিলার দিয়ে ঢালাইয়ের কাজের শুরু করেছেন তিনি। তবে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। শৈলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দিওড় ইউনিয়নের শৈলাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান ১৯৯৩ সালের

নভেম্বরে দলিল নম্বর-৫৩০৩ মোতাবেক ২৯ শতাংশ জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দানপত্র দলিলে রেজিস্ট্রি করে দেন। এর দুই বছর পর ১৯৯৪ সালে একই দাগে আবারও ৩৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন তিনি।

পরে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে ৬২ শতাংশ জমির মধ্যে ৩৩ শতাংশ বিদ্যালয়ের দেখিয়ে ২৯ শতাংশ নিজের বলে প্রধান শিক্ষক দখল করে নিয়ে ওই স্থানে বাড়ি নির্মাণকাজ চালাতে থাকেন।
এদিকে ওই এলাকার এক গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করা হয় ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয়ের আলমাস নামের এক শিক্ষার্থী বলেছে, বড় স্যার যেখানে বাড়ি নির্মাণ করছেন এতে আমাদের খেলার মাঠ থাকবে না। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে বাড়ি নির্মাণ করলে আমাদের বেশ সমস্যা হবে।

মিনারা নামের এক শিশুশিক্ষার্থী বলেছে, আমরা ছোট্ট মানুষ, আমরা এই মাঠে খেলতে চাই। বাড়ি নির্মাণের জন্য স্যারের অনেক জায়গা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের মাঠে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস জানান,

বর্তমান প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান খেলার মাঠ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এসংক্রান্ত একটি অভিযোগ বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেছি। প্রধান শিক্ষক নির্বাহী কর্মকর্তার শুনানিতে অংশগ্রহণ না করে জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমান বলেন, আমার বিষয়ে আনীত অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমি আমার নিজের জায়গায়ই বাড়ি নির্মাণ করতেছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিনারা পারভীন বলেন, আমি ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিদ্যালয়ের মাঠে বাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বিল্ডিং নির্মাণ চলছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র কালের কণ্ঠ

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ