বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

প্র’বাসী বাবা-ছেলের প্রাণহানি পুলিশ হেফাজতে ১২

প্রতিনিধির নাম / ১৭৮ বার
আপডেট : বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২

সিলেট জেলা প্রতিনিধি।। প্র’বাসী বাবা-ছেলের প্রাণহানি পুলিশ হেফাজতে ১২

সিলেটের ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবারের দুজনের মৃ’ত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১২ স্বজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন মৃ’ত রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ জুলাই)) ওই পরিবারের ৫ জনকে ওসমানীনগরের তাজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলচন্ডী সড়কের একটি বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। যে কক্ষে ওই ৫ জনকে অ’সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার পাশের কক্ষেই ছিলেন এই স্বজনরা।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, বিষক্রিয়ায় অসুস্থতা ও মৃ’ত্যুর ঘটনা ঘটেছে।মা’রা যাওয়া দুজন হলেন—যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম। অ’সুস্থ হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রফিকুলের স্ত্রী হুছনারা বেগম এবং দুই ছেলে-মেয়ে সাদিকুল ইসলাম ও সামিরা ইসলাম।

ওসমানীনগরের তাজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলচন্ডী সড়কের একটি বাসা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে অচেতন অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার পর রফিকুল ও তার ছোট ছেলে মাইকুল মারা যান।

ঘটনার খবর পেয়ে রফিকুলের আরেক শ্যালক সেবুল আহমদ গ্রাম থেকে সেখানে আসেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিল। ছোট ছেলে মাইকুল ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার চিকিৎসা করাতে গত ১২ জুলাই স্বপরিবারে দেশে ফেরেন রফিকুল। এক সপ্তাহ ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই তাজপুরের ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় ভাড়া নিয়ে সেখানে ওঠেন।

সেবুল আরও জানান, সোমবার রাতের খাবার শেষে রফিকুল তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং তার শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও মেয়ে সাবিলা পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে তারা ডাকাডাকি করার পরও রফিকুল বা তার স্ত্রী-সন্তানদের কেউ রুমের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশ ডাকা হয়।

সেবুল জানান, পুলিশ ওই কক্ষের দরজা ভাঙার পর দেখা গেছে, দুই বিছানার মধ্যে একটিতে রফিকুল, হুছনারা ও তাদের মেয়ে সাবিরা ছিলেন। আরেক বিছানায় ছিলেন মাইকুল ও সাদিকুল। তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে শুয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেলেও বিছানা দুটি ছিল এলোমেলো।

তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে হতাশ ছিলেন রফিকুল। তার চিকিৎসায় কোনো ফল পাচ্ছিলেন না। তবে এই মৃত্যুর ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে তার ধারণা।

হুছনারার চাচাতো ভাই গোলাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা এসেছি। কে বা কারা কীভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা জানি না। আমার বোনের পরিবারের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা গেছে, ওই বাসায় ৩টি শয়নকক্ষ, ১টি রান্নাঘর ও ১টি খাবার কক্ষ রয়েছে। অচেতন অবস্থায় ৫ জনকে একটি শয়নকক্ষেই পেয়েছে পুলিশ। সেই কক্ষের আসববাপত্র এলোমেলো পড়ে আছে।

এই প্রবাসীরা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেটির মালিক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলক।ঝলক বলেন, তাদের বাড়ি উপজেলার দয়ামীরে। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা কিছুই বুঝতেছি না।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইনুল ইসলাম বলেন, রফিকুল পরিবার নিয়ে যে বাসায় ভাড়া ছিলেন, সেই বাসাতেই অন্য কক্ষে তার শ্বশুর, শাশুড়ি, এক শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রী ছিলেন। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ পর্যন্ত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কিছু পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দলও।সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা চিকিৎসকের বরাতে জানান, খাবারে বিষক্রিয়া থেকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন আলামত জব্দ করে এনেছি। বিশেষত ওই বাসার সব খাবার নিয়ে এসেছি। এগুলো রাসায়নিক ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

একই বাড়িতে খাবারে বিষক্রিয়ায় ৫ জন অসুস্থ হলেও অন্যরা সম্পূর্ন সুস্থ কীভাবে ছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে সুজ্ঞান বলেন, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। আমরা সবদিক বিবেচনা করেই তদন্ত করছি।

দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ গিয়ে কক্ষের দরজা ভেঙে ওই ৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসক রফিকুল ও মাইকুলকে মৃ’ত ঘোষণা করেন।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল

 

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ