নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী খবর ||
ন্যায়বিচারক দুনিয়া ও আখেরাতে সবচেয়ে সম্মানিত হবেন। ন্যায়বিচারক আল্লাহর আরশের নিচে অবস্থান করবেন। ইসলামে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। কারো পক্ষপাতিত্ব কিংবা ঘুষ গ্রহণ করে অন্যায়ভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করে কারো অধিকার খর্ব করা দেশীয় ও শরয়ি আইনে মারাত্মক অপরাধ।
এই অন্যায় কাজের জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ন্যায়বিচারকারী আল্লাহর কাছে আরশের ডানে নূরের মিম্বরে অবস্থান করবে। আল্লাহর উভয় হাত ডান। এ অবস্থানে ওইসব লোকেরা থাকবে, যারা নিজের পরিবারে এবং নিজের জনগণের প্রতি ইনসাফের সঙ্গে বিচারকার্য সম্পন্ন করে (মুসলিম : ৪৬০৭)।’
অন্য হাদিসে জানা যায়, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘শোনো! তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি হাকিম এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার অধীনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। অতঃপর যে আমির লোকদের ওপর হাকিম সে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের জন্য হাকিম। সে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘর ও তার সন্তানদের ওপর হাকিম। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। চাকর তার মালিকের সম্পদের ওপর হাকিম। সে তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই হাকিম আর প্রত্যেক ব্যক্তি তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে (মুসলিম : ৪৬১০)।’
হজরত হাসান বর্ণনা করেন, উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ হজরত মাটির ইবনে ইয়াসার (রা.)-এর সেবা করতে গেলেন এমন রোগাক্রান্ত অবস্থায় যে, রোগের কারণে তিনি মারা গেছেন। হজরত মাকিল (রা.) বলেন, ‘আমি তোমাকে এমন এক হাদিস শোনাব যেটি আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি। আমার যদি এই বিশ্বাস থাকত যে আমি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকব তাহলে এ হাদিস না শুনাতাম। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কোনো অধীনস্তদের ওপর হাকিম বানাবেন আর ওই ব্যক্তি যেদিন মারা যাবে সেদিন ওই অধীনস্তদের সঙ্গে খেয়ানত করে মরবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জান্নাত হারাম করে দেবেন (মুসলিম : ৪৬১৪)।’
হাদিসে ‘আল্লাহ তায়ালার ডান পাশে’ বলে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা নিকটতম, উচ্চমর্যাদা ও ভালো অবস্থায় থাকা। উপর্যুক্ত হাদিসে বলা হয়েছে যে, অধীনস্তদের সঙ্গে ইনসাফ না করলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। এতে একটা আপত্তি আসতে পারে যে, ইনসাফ না করা ও খেয়ানত করা কবিরা গুনাহ। এর দ্বারা জান্নাত হারাম হওয়ার অর্থ কী? জবাবে বলা যাবে, যে ব্যক্তি এটাকে হালাল মনে করবে তবে সে কাফের হয়ে যাবে। তখন তার ওপর জান্নাত হারাম হবে। অথবা এরূপ ব্যক্তির ওপর প্রথমেই জান্নাত হারাম হবে। গুনাহের শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে যাবে। অথবা এরূপ ব্যক্তির হিসাব খুবই দীর্ঘ হবে, ফলে প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, হিসাব-নিকাশ শেষ করে পরের জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুতরাং, দুনিয়ার ক্ষমতা ও সম্পদের লোভে পড়ে অন্যায়-বিচার করে কারো ক্ষতি করা কোনো বিচারকের জন্য উচিত নয়। বিচারকার্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আল্লাহর ভয় ধারণ করতে হবে, যেন কারো প্রতি সামান্যতম জুলুম না করে সুষ্ঠুভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারে এবং মানুষের অভিশাপ থেকে আশ্রয় চাইতে হবে, যেন তার বিচারকাজ কারো অভিশাপের কারণ না হয়।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । রিপু /নরসিংদী খবর