রাজধানীর ধানমন্ডিতে নায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসিন খান ফেসবুকে লাইভে এসে নিজের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
লাইভে এসে মহসিন খান বলেন, আমার বয়স ৫৮ বছর, কোনো একসময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। তাই এখন আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আজকের লাইভে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানানো। এ অভিজ্ঞতা থেকে আপনারা হয়তো অনেক কিছু জানতে পারবেন, সাবধানতা অবলম্বন করবেন। গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। উনার একটি ছেলে, কিন্তু মা মারা যাওয়ার খবর পেয়েও সে দেশে আসেনি। এ বিষয়টি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার একটা ছেলে, সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে, আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়ে থাকি, আমার মনে হয় না, এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে না। এজন্য লাইভে আসা।লাইভ ভিডিওটি চলেছিল ১৭ মিনিট ধরে।এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া।
আনন্দবাজার লিখেছে, লাইভ ভিডিওটি চলেছিল ১৭ মিনিট ধরে। আত্মহত্যা করবেন, সে কথা বলার পর আরও প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেছিলেন মানুষটি। তারপরও তাকে আটকানো গেল না। জরুরি ভিত্তিতে করা ফোন পেয়ে পুলিশ যখন তার বাড়ির দরজায় গিয়ে পৌঁছল, তখন তিনি আর নেই।
দরজা খুলেই রেখেছিলেন। বাইরে একটি সাদা কাগজে ভিতরে ঢোকার অনুমতিও লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে নিষ্প্রাণ দেহ। পাশে রাখা ছিল একটি সাদা কাপড়। যা তার শেষ শয্যায় ব্যবহার করা হবে। এমনকি কোথায় তিনি শায়িত হতে চান, তার নির্দেশও লেখা ছিল একটি কাগজে। এমন পরিকল্পিত আত্মহত্যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন ওই ব্যক্তির পরিচিতরা।
আবুর ফেসবুক লাইভ যারা দেখেছেন তাদের উদ্ধিৃতি দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, কথা বলতে বলতে নিরন্তর চোখের জল ফেলেছেন আবু। চশমার কাচ বার বার ঝাপসা হয়েছে তার। নিজের ব্যবসা ভাল ভাবে পরিচালনা না করতে পারার জন্য আফশোস করেছেন। সেই সঙ্গে তার অপরাগতার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। চূড়ান্ত হতাশা থেকেই যে আত্মহত্যা করতে চলেছেন মানুষটি তা লাইভের দর্শকেরা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছিলেন।
অনেকেই কমেন্ট করে বিরত হতে বলেন তাকে। তাকে মানসিক ভাবে শান্ত করার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। দর্শকেরা জানিয়েছেন, আবুকে একসঙ্গে ছবি আকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এক চিত্রশিল্পী। অনেকেই তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য নিজেদের বাড়িতেও আসতে বলেন। তবে ওইটুকুই। এর বেশি আর কিছু করা হয়নি তাকে বাঁচানোর জন্য। অনেক পরে পুলিশের কাছে ফোন যায়। পুলিশ লাইভ ভিডিয়ো দেখে সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। নেটাগরিকদের অনেকেই এই দেরির কথা বলে আফসোস করছেন।
দর্শকরা জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে আবু বলেন, ‘‘আজ যারা এই ভিডিও দেখছেন, তারা হয়তো এই শেষবার দেখছেন আমাকে। এই পৃথিবীর কোনও মানুষের প্রতি আর আমার ভালবাসা নেই। আমার আত্মীয়দের সঙ্গে যদি অন্যায় করে থাকি, তবে ক্ষমা করে দিও।’’ এরপর একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে দর্শকদের দেখান আবু। সেটি যে সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত সে কথা জানিয়েই নিজেকে গুলি করেন।
শুক্রবারের ওই লাইভ ভিডিওটি ফেসবুক মুছে দিয়েছে। তবে ওই ভিডিওটি এখনও দেখা যাচ্ছে অনেকের ফেসবুক পেজে। বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনাও। তসলিমা নাসরিন, ঢাকার বিনোদন জগতের তারকা হিরো আলম এবং অনেকেই ওই আত্মহত্যা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ওই প্রৌঢ়ের স্ত্রী-সন্তানদের ভূমিকা নিয়েও।