প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসেছে ‘বস’। মালিকের সঙ্গে সোমবার (৪ জুলাই) ঢাকার ভাটারা থানাধানী সাঈদ নগর (বালুর মাঠ) হাটে এসেছে এই বস। এত পথ পাড়ি দেওয়ায় বসের শরীরে প্রভাব পড়েছে। আসার পর স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছে না। গরুটির ওজন প্রায় ৩৫ মণ বলে দাবি তার মালিকের।
হাট ঘুরে দেখা গেছে, বসের শরীর শীতল রাখতে দুই দিকে দুটি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান স্থাপন করা হয়েছে। সামনে রাখা আছে খাবার।
বিদ্যুতের লাইনের কাজের জন্য কোনো কারণে হঠাৎ ফ্যান বন্ধ হয়ে গেলে ছটফট করছে বস। এ সময় তার সেবায় নিয়োজিত থাকা লোকজনকে চার্জার ফ্যান দিয়ে বাতাস দিতে দেখা যায়।
নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে বসসহ দুটি গরু নিয়ে এসেছেন শফিকুল ইসলাম। গত ৩ বছর ধরে অত্যন্ত যত্ন সহকারে বসকে লালন-পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গরুটি অনেক যত্নে বড় করা। গত তিন বছর নিজের সন্তানের মতো করে গরুটিকে বড় করেছি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে ঢাকার এই হাটে এনেছি। গরুটির ওজন ৩৫ মণ, দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮ লাখ টাকা। গরু হাটে আনার পর অনেকেই দেখতে আসছে, দরদাম করছে। এখন দেখতে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি। হাট এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি, তাই ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি অনেক কম।
শফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় আমার ছোট ব্যবসা আছে। ব্যবসার পাশাপাশি গরু লালন-পালন করি। এবারই প্রথম গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছি। যে ক্রেতা এই গরু কিনবে তিনি ঠকবেন না বরং জিতবেন। আমার একটা ছেলে আছে, গরুটিকে আমি ছেলের মতো করে বড় করেছি। ভালোমানের খাবার খাওয়ানো হয়েছে সবসময়। গরমের সময় দুটি ফ্যান সবসময় তার জন্য চালু থেকেছে, কয়েল জ্বালিয়ে মশারি টানিয়া তাকে ঘুম পাড়িয়েছি। আল্লাহর রহমতে গরুটি দেখার মতো হয়েছে। চেহারা, ওজন, সুস্থতায় এই গরু সেরা বলে দাবি তার।
বালুর মাঠের এক নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ডান পাশে ঢুকলেই দেখা মিলছি বসের। গরুটি দেখতে সবসময় ভিড় লেগে থাকছে এই স্থানে। হাটে গরু কিনতে আসা খিলক্ষেত এলাকার ব্যবসায়ী মকিদুর রহমান বলেন, আজ (সোমবার) হাটে এসেছি গরু দেখতে, তবে ভালো লাগলে, দামে হলে কিনতেও পারি। হাটে ঘুরতে ঘুরতে শুনতে পেলাম বড় একটি গরু আছে এখানে। এটা শুনেই বস নামের এই গরুটি দেখতে এসেছি। গরু দেখতে অনেকেই ভিড় করছে এখানে। আসলেই গরুটি দেখার মতো। তবে দাম অনেক বেশি।
নাটোর থেকে ঢাকার হাটে আসা গরুটির দেখভাল করার জন্য আছেন আরও দুই জন পরিচর্যাকারী। তাদের মধ্যে একজন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গরুটির পরিচর্যার অংশ হিসেবে খাওয়ানোর ব্যবস্থা, ফ্যান দিয়ে সার্বক্ষণিক বাতাস দিতে আমরা কাজ করছি। এত বড় গরু, সেবার কোনো ক্রুটি হলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই আমরা গরুটিকে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
সাঈদ নগর (বালুর হাট) হাট পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা মোহম্মাদ হাবিবুল্লাহ বলেন, হাটে বড় বড় অনেক গরু আছে, তবে এদের মধ্যে ওজনে সবচেয়ে বেশি ও বড় গরুটি হলো নাটোর থেকে আসা বস। বলতে গেলে গরুটি এই হাটের একটি আকর্ষণ। যদিও হাটে কেনাবেচা এখনও সেভাবে শুরু হয়নি, তাই ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেকটাই কম। তারপরও অনেকেই এই গরু দেখতে আসছে। মাঝে মাঝে ক্রেতারাও আসছে, দরদাম করছে। গরুর মালিক দাম চেয়েছেন ১৮ লাখ টাকা। হাট জমলে দেখা যাবে কী অবস্থা হয়।