ধর্ম ডেস্ক।। দুনিয়ার ছোট ভুলও তাড়া করবে পরকালে
দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী জীবন হচ্ছে পরকাল। পরকালীন জীবন শুরু হবে মৃত্যুর পর থেকে। পরকালীন সুখ বা শাস্তি নির্ভর করে দুনিয়ার আমলের ওপর। মৃত্যুর পরে আর কোনো আমল নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও, অথচ আখেরাত হচ্ছে উত্তম ও স্থায়ী’ (সুরা আলা: ১৬-১৭)।
যখন হাশর শুরু হবে, সবাই পরিষ্কার বুঝতে পারবে যে, অনন্ত জীবন শুরু হয়েছে। পরিচিতজনরা সবাই সবাইকে চিনতে পারবে। দুনিয়ার জীবনকে মনে হবে খুবই সীমিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনি যখন (কেয়ামতের দিন) তাদের একত্রিত করবেন, তাদের মনে হবে, (পৃথিবীতে) তারা যেন দিনের সামান্য সময় অতিবাহিত করেছে। (সেখানে) তারা একে অন্যকে চিনতে পারবে। আল্লাহর সাক্ষাৎ যারা অস্বীকার করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না। (সুরা ইউনুস: ৪৫)
সেখানে দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পদক্ষেপের কথা তাদের মনে পড়বে। মানুষ নিজেদের অপরাধ শনাক্ত করে আল্লাহর ন্যায়বিচারের মর্ম অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। একদিকে তাদের সামনে থাকবে আখেরাতের অনন্ত জীবন, অন্যদিকে তাদের স্পষ্ট অতীত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেদিন তারা তা (কেয়ামত) প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দুনিয়ায় মাত্র এক সন্ধ্যা বা এক সকাল অবস্থান করেছিল’ (সুরা নাজিয়াত: ৪৬)।
‘আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, ‘তোমরা দুনিয়ায় কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন বা দিনের কিছু অংশ’। (সুরা মুমিনুন: ১১৩)
পেছনে ফিরে তাকাবে আর উপলব্ধি করবে যে, দুনিয়ার সামান্য সময় আল্লাহর হুকুম মানলেই চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু তারা সেটি না করে নিজেদের চিরন্তন ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। দুনিয়ায় যারা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখেনি, জান্নাত-জাহান্নাম বিশ্বাস করেনি, তারা আমলনামায় নিজেদের জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেখে হতবাক হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তাদের সেই অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে—
‘আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে- হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট-বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি। সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সুরা কাহাফ: ৪৯)
নেককার বান্দাদের আমলনামা গ্রহণের বিষয়টি কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—‘যাকে আমলনামা দেওয়া হবে তার ডান হাতে, সে বলবে, হে লোকজন! এই যে আমার আমলনামা তোমরা পড়ে দেখো; আমি আগেই বিশ্বাস করেছিলাম যে, আমাকে অবশ্যই হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে!’ (সুরা হাক্কাহ: ১৯-২০)
এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত বিধান ও ফায়সালা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর তোমরা কেয়ামতের দিন তোমাদের (আমলের) পরিপূর্ণ বদলা পাবে। আর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে সফলতা অর্জন করবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন,‘জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করল আর পরকালের জন্য আমল করল। আর জাহেল বা বোকা সেই ব্যক্তি, যে আত্মাকে কামনা-বাসনার অনুসারী করে দিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহের আশায় বসে আছে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯)
তাই যারা পরকালের ব্যাপারে উদাসীন, যারা নিজ প্রতিপালকের স্মরণ থেকে গাফেল, তাদের জন্য উল্লেখিত আয়াতগুলো সকর্তবার্তা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময় থাকতে নেক আমলের দিকে প্রত্যাবর্তনের তাওফিক দান করুন। পরকালের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি দিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাত নসিব করুন। আমিন।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল