জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, নরসিংদী জার্নাল।। তবুও বাঁচতে দেয়নি’ ‘বাঁচতে বাসা থেকে দৌড় দেয়,
‘অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা আমার ঘর থেকে পালিয়ে যায়। জান বাঁচাতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তবুও বাঁচতে দেয়নি। ইফতেখার কানাডা থেকে এসে তিন দিন ধরে অত্যাচার করে। নানাভাবে এলমাকে টর্চার করে। আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এভাবেই নিজের দুঃখের কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী মেঘলার বাবা সাইফুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান মেঘলা। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই মেঘলার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী হত্যার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মেঘলার স্বামী ইফতেখার আবেদীন, শ্বশুড় অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আমিন ও শাশুড়ি শিরিন আমিনকে আসামি করা হয়।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গত ৩১ মে তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কাজী শরীফুল ইসলাম ইফতেখার আবেদীনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ইফতেখারের সৎ বাবা মো. আমিন ও মা শিরিন আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ২০ জুন ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে মামলাটি শুনানির জন্য ধার্য ছিল। ওইদিন ইফতেখার এবং মা ও বাবা আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিন বর্ধিতের আবেদন করেন। আদালত ইফতেখারের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে ইফতেখাতের বাবা ও মায়ের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে ডিবি পুলিশের দেওয়া চার্জশিট প্রত্যাখান করেছেন মেঘলার বাবা। চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দিবেন জানিয়ে মেঘলার বাবা সময় আবেদন করেন। আদালত আগামী ৩ আগস্ট নারাজির বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, একটা চার্জশিট দিয়েছে। তারা আমাদের কোনো তথ্য নেয়নি। আমাদের কোনো কথা শোনেনি। মেঘলাকে যে টর্চার করা হয়েছে, এর ভিডিও আমাদের কাছে আছে। ডকুমেন্ট রয়ে গেছে। তাকে যে হত্যা করা হয়েছে এর প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। মেঘলা আত্মহত্যা করেনি। ওকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেবো’
তিনি বলেন, ‘মেয়ে আমাদের বলেছে ওর জীবনের হুমকি আছে। ইফতেখারকে ছেড়ে আসলে মেঘলাকেও মেরে ফেলবে, সঙ্গে আমাদেরও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একটা মেয়ে বিদেশে যাওয়া নিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে?’
মেঘলার বাবা বলেন, ‘ইফতেখার মেঘলার ইচ্ছায় তাকে বিয়ে করে। লোভ দেখায়। লোভে মেয়েটা পটে যায়। সে বিষয়টি আমাদের জানায়। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বন্ধুরা সারাদিন মেঘলাকে ফোন দেয়। এতে বিরক্ত হয় ইফতেখার। বলে, এত ফোন আসে কেন? কারা ফোন দেয়? মেঘলা অনেককে বাসায় ডেকে এনে ইফতেখারের সঙ্গে মিট করায়। ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে। মেঘলার চুল কেটে দেয়, হিজাব পরায়। বলে বাসার বাইরে বের হতে পারবে না। আমরা বাসায় গেলে আমাদের সামনেও বোরখা পড়ায়। এসব কর্মকাণ্ড দেখে বুঝি বিপদে পড়ে গেছি। ’
সন্তান হারানো এ বাবা বলেন, ‘১১ ডিসেম্বর হঠাৎ না জানিয়ে ইফতেখার চলে আসে। দুবাই এসে মেঘলাকে ফোন দেয় এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করতে। মায়ের পরামর্শে কানাডা থেকে এসে মেঘলাকে হত্যা করে ইফতেখার। জান বাঁচাতে মেয়েটা আমার বাসা থেকে দৌড় দেয়। তাকে ধরে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চার মেয়ের মধ্যে মেঘলা বড়। আশা ছিল মেয়েটা বিসিএস ক্যাডার হবে। তা আর হতে পারলো না। মেঘলাকে হারিয়ে ওর তিন বোনই মনমরা হয়ে গেছে। এখন যদি বিচারও না পাই। তবে ইফতেখারের জামিন বাতিল হওয়ায় আবার ভরসা পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবো। এজন্য সবার সাহায্য চাই।’
ইফতেখারের আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, মেঘলাকে হত্যা করা হয়নি। সে তো আত্মহত্যা করেছে চার্জশিটে তা উঠে এসেছে।
অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জতি থাকায় মেঘলা আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন এ আইনজীবী।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান মেঘলা। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই মেঘলার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ইফতেখার আবেদীন, শ্বশুড় অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আমিন ও শাশুড়ি শিরিন আমিনকে আসামি করা হয়। মামলার পর ইফতেখারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন দফা তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত ইফতেখারের জামিন মঞ্জুর করেন।
এরপর ১৭ মে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তারা। চার্জশিট দাখিলের পর গত ২০ জুন তারা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত ইফতেখারের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে ইফতেখারের মা ও বাবার জামিন মঞ্জুর করেন।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল