ছবি সংগ্রহীত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় ওই ডিপো পরিচালনায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি দলীয় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘তিনি (মালিক) অনুমোদন ছাড়া ডিপো তৈরি করেছেন, সেই ডিপোতে অনুমোদন না নিয়ে কেমিকেল রেখেছেন। এমন কি যখন সেখানে আগুন লেগেছে তখন অগ্নিনির্বাপণের জন্য যারা গেছেন তাদের কেমিকেলের বিষয়ে অবহিত করেননি তিনি।
এই খুঁটির জোর তিনি কোথা থেকে পেলেন? এই খুঁটির জোর তিনি পেলেন এই কারণেই যে এই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ক্ষমতাসীন দলের এমন একটি পদে থেকে কোনো নিয়ম-কানুন মানার প্রয়োজনীয়তা সম্ভবত তিনি বোধ করেন নাই।’
রুমিন বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। কন্টেইনার ডিপোর মালিকের চরম উদাসীনতায় এতগুলো জীবন ঝড়ে গেছে।’
মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে যেন দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে ব্যাপারে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুমিন ফারহানা বলেন,
‘দুই দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনও বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আইন ভঙ্গ করে তিনি ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ বিশেষ কোনো অবকাঠামো ছাড়াই স্টোর করেছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের কাউকে জানানো হয়নি, এখানে দাহ্য পদার্থ আছে। তাহলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এতগুলো প্রাণ আমাদের হারাতে হতো না। আমি আপনার মাধ্যমে অনুরোধ জানাবো যাতে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
এরআগে, সোমবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালে মারা যায় ১১১ জন পোশাক কর্মী। সেই ঘটনার মূল আসামি তাজরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন।
রুমিন ফারহানা সে ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এই মামলার ১০ বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বরং এই দেলোয়ার হোসেনকে সম্প্রতি ঢাকা মহানর উত্তর আওয়ামী মৎসজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।
রাজধানীর নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানা বলেন, ২০১০ সালে এই দিনে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১২৪ জন। শুনতে খুব অবাক লাগলেও সত্য যে, এই বিভৎসতম দুর্ঘটনায় যেখানে ১২৪ জন মারা গেছে সে ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। একটি জিডি হয়েছিল যার তদন্ত এখনও চলমান।
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, নিমতলীর ঘটনায় কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি,কোনো মামলা হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে চুরিহাট্টায় ঘটে একই ঘটনা। এ দুটি ঘটনার কারণ একটাই কেমিকেল গুদাম। ওই ঘটনার সরকার বলেছিল কেমিকেল গুদাম সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো পুরনো ঢাকা থেকে সেই গুদাম সরানো হয়নি। সেখানে ১৫ হাজার কেমিকেল গুদাম ও দোকানের নামে বারুদ রয়েছে। মানুষ বসবাস করছে এর মধ্যে।
জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, সীতাকুণ্ডের নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ ঘটনাটিকে কী আমরা দুর্ঘটনা হিসেবে সান্তনা নেবো? নাকি এর পেছনে কোন নাশকতা রয়েছে। নিশ্চয়ই সরকার তদন্ত করে তা বের করবে বলে আশা রাখি। যদিও এসব ঘটনার তদন্তের আলোর মুখ আমরা দেখি না।
তিনি বলেন, একটি জনবহুল এলাকাতে কীভাবে ডিপোর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট দেই কিন্তু কেন ফায়ার সার্ভিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আনতে পারি না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমরা পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প সম্পন্ন করি তখন বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
বিশ্বগণমাধ্যম আমাদের প্রশংসা করে খবর হয়। কিন্তু এর বিপরীতে এই আগুনে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয় সেই লজ্জা আমরা রাখি কোথায়? ফায়ার কর্মীদের হাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিতে পারলে সীতাকুন্ডের ট্রাজেডির গল্পটা পজিটিভভাবে বিশ্বের কাছে আসতো। কিন্তু সেটা হলো না।
তিনি বলেন, সরকার দেশের উন্নয়ন প্রকল্প করছেন ভালো… কিন্তু দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা যোজন যোজন দূরে আছি সীতাকুণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে।
সূত্র সময়ের কণ্ঠস্বর