সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

“গর্ভভাড়া: ইসলাম কী বলে?”

রিপু / ৬৬ বার
আপডেট : রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী খবর ||

আধুনিক বিশ্বে সন্তান জন্মদানের নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘সারোগেসি’। সম্প্রতি দেশেও একশ্রেণির মানুষের মধ্যে এর প্রবণতা বাড়ছে। সারোগেসির সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো গর্ভভাড়া।

অর্থাৎ সারোগেসি এমন এক ধরনের পদ্ধতি যেখানে সন্তান জন্মদানের জন্য গর্ভ ভাড়া করা হয়। এ পদ্ধতিতে একজন নারী তার নিজের গর্ভে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অন্যের সন্তান ধারণ করে ও জন্ম দেয়। একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের এ পদ্ধতিকেই সারোগেসি বলে। এ ক্ষেত্রে গর্ভ ধারণের কাজটি যে নারী করেন তাকে ‘সারোগেট মাদার’ বলা হয়। অনেকে নিজেদের দেহাবয়ব ঠিক রাখতে এ পদ্ধতি গ্রহণ করছে বলেও প্রচার করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, ইসলামে সন্তান জন্মদানের যে প্রকৃতিগত বিধান দিয়েছে, তার সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে না। এ বিষয়ে কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো।

সারোগেসির প্রকার
সারোগেসি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- ক. পার্শিয়াল সারোগেসি। খ. টু সারোগেসি/হোস্ট সারোগেসি। পার্শিয়াল সারোগেসিতে সন্তান ধারণে মা কোনো ভূমিকাই পালন করেন না। বাবার শুক্রাণু ও সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু আলাদাভাবে ফার্টিলাইজ করে সারোগেট মায়ের গর্ভ ধারণ এবং সন্তান প্রসব করানো হয়। পার্শিয়াল সারোগেসিতে সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু ও গর্ভ দুটিই ভাড়া নেওয়া হয়। টু সারোগেসিতে মূলত একজন নারীর মধ্যে পুরুষের শুক্রাণু ও মায়ের ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।

সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার কারণ
অনেক নারীর জন্মগতভাবে জরায়ু না থাকা বা অসম্পূর্ণ থাকার কারণে। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বারবার মিসক্যারেজ হওয়ার কারণে। অনেক নারী জিনগতভাবে আবার অনেকে কোনো জটিল রোগ বা জরায়ুতে অপারেশনের কারণে সন্তান গর্ভ ধারণে সক্ষম হন না। তখন এমন দম্পতি সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নিতে চান। অনেকে চাকরিজীবী বা কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তান গর্ভে বহন করার সময় নেই মনে করে সারোগেসির পথ অবলম্বন করেন। অনেক বিত্তশালী, বিলাসী নারী গর্ভ ধারণের কষ্ট সহ্য করবে না বলে গর্ভ ভাড়া করে সন্তান নিতে চান। অনেক নারী, বিশেষত অভিনেত্রীরা শারীরিক ফিগার বা সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে সন্তান নিজ গর্ভে ধারণ করতে চায় না। এরকম নানা কারণে মানুষ সারোগেসিতে সন্তান নিতে আগ্রহী হয়। সারোগেট মা বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থাকেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে সারোগেসির বিধান
ইসলামের দৃষ্টিতে সারোগেসি সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। কারণ প্রথমত নারীর জরায়ু ব্যবহার একমাত্র স্বামীর জন্য সংরক্ষিত। কোনো পর পুরুষের জন্য কোনোভাবেই একজন নারীর জরায়ু বা গর্ভ ব্যবহারের সুযোগ নেই। সুতরাং সারোগেসি পদ্ধতিতে নারীর গর্ভ ভাড়া দেওয়া এবং কোনো পুরুষ/দম্পতি কর্তৃক তা ভাড়া নেওয়া উভয়টি নাজায়েজ। দ্বিতীয়ত এটি জিনার অন্তর্ভুক্ত। আবু দাউদ শরিফে হজরত রোওয়াইফা ইবনে সাবেত আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে সারোগেসি নিষিদ্ধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহর নবী মোহাম্মদ (সা.) বলেন, আল্লাহ এবং আখেরাতে ঈমান রাখে এমন কারো জন্য বৈধ নয় যে, সে তার পানি অন্যের ক্ষেতে সিঞ্চন করবে। অর্থাৎ অন্যের জরায়ুতে তার বীর্য রাখবে। (আবু দাউদ : ২১৫৮)। আর এটা সারোগেট মায়ের জন্য চরম অপমানকর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।’ (সুরা ইসরা : ৭০)। এ জন্য মানুষের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা বা ভাড়া দেওয়া জায়েজ নেই। কারণ তা আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থি। আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমির স্কলাররাও সম্মিলিতভাবে সারোগেসি অবৈধ হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তা ছাড়া সারোগেসি পদ্ধতিতে একজন নারী গর্ভ ধারণ করে আরেকজন নারী সন্তানের মা হওয়ার সুযোগ নেই। মা হতে হলে তাকে সন্তান ধারণে অবশ্যই মায়ের ভূমিকা পালন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তাদের মা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে প্রসব করেছে।’ (সুরা মুজালা : ২)।

বিকল্প সমাধান
ইসলাম একজন স্বাধীন পুরুষকে শারীরিক ও আর্থিক সঙ্গতিসাপেক্ষে চারটি বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে। প্রথম স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান না হলে দ্বিতীয় বিয়ে করে সন্তান নেওয়া সম্ভম। অথবা শর্তসাপেক্ষে টেস্ট টিউব বেবির মাধ্যমেও সন্তানের মা-বাবা হওয়া যায়। অতএব মুসলিম দম্পতির জন্য সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার সুযোগ নেই। আল্লাহ বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ   রিপু /নরসিংদী খবর

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ