খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়,বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক || ক্যাপসিকামের গবেষণায় সফল খুবির সোহেল
স্বল্প আলোয় ক্যাপসিকাম চাষে সফলতা পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা। এই ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে জার্মপ্লাজম সেন্টারে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। সোহেল লাল, হলুদ, সবুজ, কমলা, বেগুনি ক্যাপসিকাম নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তিনি স্বল্প রৌদ্র-আলোতে মালচিং শিট ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। গবেষণায় দেখা যায়, ছায়াযুক্ত স্থানে ক্যাপসিকাম চাষ করা হলেও প্রতিটি গাছে প্রায় ১০-১৫টি ও সর্বোচ্চ ২০টি ক্যাপসিকাম ধরেছে। প্রতিটি ক্যাপসিকামের ওজন প্রায় ৭০-২০০ গ্রাম। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৭০০-৯০০ গ্রাম ক্যাপসিকাম পাওয়া গেছে।
সোহেলে জানান, ক্যাপসিকাম চাষে সবচেয়ে বড় বাধা হলো বিভিন্ন মাকড়ের আক্রমণ। বিশেষ করে এফিড, থ্রিপস ও সাদা মাছি। এজন্য চারা রোপণের পরের দিনই ইমিডাক্লোরোফিড বা এসিটামপিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন বিল্ডার বা তুন্দ্রা ব্যবহার করতে হয়। গবেষক বলেন, জমি তৈরির সময় রাসায়নিক সারের সঙ্গে কার্বফুরান গ্রুপের ফুরাডান ব্যবহার করলে গাছে ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট হয় না।
ক্যাপসিকামের প্রথম ফুল অবশ্যই ঝরে পড়ে এবং ফুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্লান্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চিলি লিফ কার্ল ভাইরাস ক্যাপসিকামের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গাছ ভাইরাস আক্রান্ত হলে তা তুলে জমি থেকে দূরে মাটি চাপা বা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। এভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষায় এর ভেক্টর দমন করতে হয়। সাধারণত সাদা মাছি, এফিড বা জাব পোকা, থ্রিপস এই ভাইরাসের ভেক্টর হিসেবে কাজ করে। এফিড ও থ্রিপস দমনে নিম ওয়েল ও কেওলিন (অরগানিক) ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভালোমানের কেওলিন সচরাচর পাওয়া যায় না।
সাদা মাছি ও এফিড দমনে ল্যাম্বডা সাইহেলোথ্রিন ও যায়ামেথোক্সেম গ্রুপের কীটনাশক ক্যারেট ও অলটিমো প্লাস বা এসিটামিপ্রিড গ্রুপের তুন্দ্রা ব্যবহার করা হয়। থ্রিপস দমনে স্পিনোসিড গ্রুপের ক্যারেট, ম্যনসার, এবেরন ব্যবহার করা হয়। মাকড়ের আক্রমণ হলে পাতা নিচের দিকে কুচকে যায় এবং ভাইরাসের আক্রমণে পাতা উপরের দিকে কুচকে যায়। মাকড় দমনে ভার্টিমেক অথবা ইন্ট্রাপিড, অ্যাবেমকটিন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। প্রতিবার কীটনাশক স্প্রে করার সময় ছত্রাকনাশক হিসেবে এন্ট্রাকল বা কার্বেন্ডাজিম, মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিতে হয়।
মাকড় কীটনাশক প্রতিরোধী হওয়ায় স্প্রে করার সময় কীটনাশক পরিবর্তন করতে হয়। মানসম্মত ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ১৬-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত নভেম্বর মাসে চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে ফলের আকার বড় হয় না। পাশাপাশি ক্যাপসিকামের গায়ে সান বার্ণ স্পট পড়ে এবং গাছ বেশিদিন বাঁচে না। আর তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে তখন ফলন তুলনামূলক কমতে থাকে।
তখন পলিহাউজ দিয়ে ছাউনি দিতে হয়। আমার গবেষণা প্রজেক্টেও ভালো ফলাফলের জন্য মালচিং শিট ব্যবহার করে তাপমাত্রা কমিয়ে রাখতে হয়েছিলো। সবুজ ক্যাপসিকাম ৯০-১০০ দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হয় যেখানে লাল, হলুদ, বেগুনি, কমলা ১২৫-১৩৫ দিন সময় লাগে। সাধারণত সারি থেকে সারি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সে. মি. রাখা হয়। ক্যাপসিকাম বৃষ্টি বা উত্তাপ কোনোটাই পছন্দ করে না। সবকিছু ঠিক থাকলে হেক্টর প্রতি ২০-২৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
এ গবেষণা ব্যাপারে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাপসিকাম বিদেশি সবজি হওয়ায় অন্য সবজির তুলনায় এর দামও অনেক বেশি। পাশাপাশি বড় বড় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অনেক চাহিদাও রয়েছে। এর পাইকারি বাজার মূল্য প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা এবং প্রতিটি গাছে ৩০-৪০ টাকা খরচ করে ১৫০-২০০ টাকা আয় করা সম্ভব। এটি চাষ করলে কৃষকরা স্বাবলম্বী হবেন। সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতেও অনেক বড় সুফল বয়ে আনবে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাসরিফ/ নরসিংদী জার্নাল