ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও সংশোধনেও উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। টাকা পেলেই সেবাপ্রার্থীর কাজ করে দেন তিনি। তা নাহলে দীর্ঘদিন ঘুরেও কোনো ফয়সালা হয় না।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২০ জানুয়ারি প্রাথমিক তদন্ত করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব (সংস্থাপন-১) মো. জিলহাজ উদ্দিন ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান।
তদন্তকালে অভিযোগকারী ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে লিখিত জবানবন্দি নেওয়ার পর অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়।
গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণকারী আহসানুল হক মামুন অভিযোগ করে বলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পরও নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল বিভিন্ন অজুহাতে প্রার্থিতা বাতিল করার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে প্রথম দফায় নগদ পৌনে ২ লাখ টাকা এবং পরে আরও দুই দফায় নগদ ৫০ হাজার টাকা ঘুস নিয়েছেন।’
একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আব্দুর রউফের অভিযোগ, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন সব কাগজপত্র চেক করে সবকিছু ঠিক আছে বলে জানিয়ে দেন নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল।
জমা দেওয়ার দুদিন পর তিনি অফিসে ডেকে নিয়ে মনোনয়নপত্রের কোনো এক জায়গায় স্বাক্ষর না থাকার কথা বলে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়ে আমার কাছ থেকে দুই দফায় নগদ ২৫ হাজার টাকা ঘুস নিয়েছেন।’
চরহরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া মো. জুলহাস শিকদার বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে বলে হুমকি দেন সাইফুল। পরে আমার কাছ থেকে দুই দফায় নগদ ৮০ হাজার টাকা ঘুস নিয়েছেন।’
একই ইউনিয়নের আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আ. বারেক মন্ডলের কাছ থেকে নগদ ৪ হাজার টাকা ঘুস নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদে অংশ নেওয়া শেখ শহীদুল ইসলামের স্ত্রী হাসিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন,
‘নির্বাচন চলাকালে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার স্বামীর পা ভেঙে যায়। এ কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল আমাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২৫ হাজার টাকা ঘুস নেন।’
এছাড়া ওই ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হেলেনা বেগমের কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা এবং ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যের কাছ থেকে আরও ৫ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইডি কার্ড করতে গিয়ে স্থানীয় অনেকেই নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুলকে হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিয়ে কাজ সেরেছেন।
আবার অনেকে দৈন্যতার কারণে ঘুসের টাকা না দিতে পেরে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি জানাজানির পর এরকম ভুক্তভোগী অনেকেই মুখ খুলেছেন।
মধু ফকির ডাঙ্গী গ্রামের আহাম্মদ মৃধার ছেলে মাহীম মৃধার অভিযোগ, ‘আমার জাতীয় পরিচয়পত্র করে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তা ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। প্রথমে শুধু ঘুরাতেন, টাকা দেওয়ার পর আমার আইডি কার্ড দেন তিনি।
একই ইউনিয়নের ব্যাপারী ডাঙ্গী গ্রামের মোকাজ্জেল খানের ছেলে মোমিন খানের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য উক্ত অফিসার নগদ ১৩ হাজার টাকা, একই গ্রামের করিম মৃধার ছেলে রুবেল মৃধার কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মো. কাউছার বলেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার বেপরোয়াভাবে ঘুস বাণিজ্য চালাচ্ছেন। তিনি কারও কথাই শোনেন না এবং টাকা-পয়সা ছাড়া কোনো কাজ করেন না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা। তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে এর সত্যতা। তখন জানা যাবে আমি দোষী না নির্দোষ।
অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুস গ্রহণের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ২০ জানুয়ারি তদন্ত হয়েছে জানিয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, তার বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত চলছে। আমরাও খতিয়ে দেখবো।
এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত চলমান।
প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ওই নির্বাচন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে।
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ খবর মিডিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। রাব্বি মল্লিক/এনজে