বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৪ অপরাহ্ন

এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, বিঘায় ক্ষতি ১৩ হাজার টাকা

নিউজ ডেস্ক, নরসিংদী জার্নাল / ১১০ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২
এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, বিঘায় ক্ষতি ১৩ হাজার টাকা

নিউজ ডেস্ক, নরসিংদী জার্নাল।। এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, বিঘায় ক্ষতি ১৩ হাজার টাকা।

এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬০-৬৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে এক মণ পেঁয়াজের দাম ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ৬৫ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও টাকা উঠে না।  ১২-১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বিঘায়। কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফূলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি লোকমান মোল্লা (৫৬)। তিনি এবার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন।

পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এবার প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৬৫ মণ করে। আর বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা হারে।

পেঁয়াজচাষিরা জানান, মৌসুমে পেঁয়াজ সংরক্ষণে জায়গার অভাব, শ্রমিকদের পাওনা ও আর্থিক প্রয়োজনে কম দামে তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে । পাশাপাশি পরবর্তী ফসল পাটের জন্য জমি প্রস্তুত, বীজ কেনা, সেচ ও শ্রমিকের খরচ যোগাতে হয় পেঁয়াজ বিক্রির টাকা দিয়ে। ফলে পেয়াজের দাম কম থাকায় তারা লাভবান হতে পারচ্ছেন না।

ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বিএ শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন সালথার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের খালিশপুট্টি গ্রামের তরুণ রুদ্র রনি (২২)। তিনি জানান, আমার তিন বিঘা জমির পেঁয়াজ উৎপাদনে মোট খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। পেঁয়াজ লাগানোর পর থেকে শুরু করে সার, সেচ, আগাছা দমন এবং ক্ষেত থেকে তুলে বাড়িতে আনতে সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকার মতো লোকসান হয়েছে বলে তিনি জানান।

সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি মো. আশরাফ সরদার বলেন, একজন শ্রমিক নিলে তাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। তাছাড়া শ্রমিকদের দুপুর ও সকালের খাবার তো আছেই। সে মোট দেড় মণ পেঁয়াজ তুলতে পারে। যার দাম ৮০০ টাকা। তাহলে আমরা কী করে বাঁচব?

সালথা উপজেলার জয়কাইল বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. খোকন শেখ জানান, তিনি গত ৫ বছর ধরে পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন। কিন্তু এত কম দাম তিনি কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, এত কম দাম থাকলে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সালথার মুরাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলবাড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, বাজারে পেঁয়াজের দাম খুবই কম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি ৮০০ টাকা দাঁড়িয়েছে।

তিনি জানান, আমরা প্রতি হাটে পেঁয়াজ কিনে সেদিনই ট্রাক ভর্তি করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই।  প্রতি বন্তাই আমাদের অল্প কিছু লাভ থাকে। মৌসুমের পেঁয়াজ আমরা সাধারণত সংরক্ষণ করি না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় নগরকান্দা ও সালথায়। বিশেষ করে সালথার কৃষকদের প্রধান অর্থকারী ফসল পেঁয়াজ। এই মৌসুমে উৎপাদিত হালি পেঁয়াজই এ অঞ্চলের মানুষের সারা বছরের জীবিকার যোগান দেয়।

তাছাড়া আরও জানা যায়, ফরিদপুরে এ বছর ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে এ বছর জেলায় আবাদ কমেছে ১৮ হেক্টর জমি।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হজরত আলী জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে।

গত বছরের তুলনায় ১৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ কমে যাওয়া ও পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে ও তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কিছু জমিতে পানি জমে থাকায় সেখানে পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কর সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকা এবং পেঁয়াজ আমদানি করার কারণে বাজারে দাম তুলনামূলক কম।

তিনি জানান, কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগই মৌসুমে বিক্রি করে দিতে হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ মেটাতে এবং পরবর্তী ফসল পাট চাষ করতে কৃষককে এটা করতে হয়। পাশাপাশি পেঁয়াজ সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাসরিফ/ নরসিংদী জার্নাল

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ