শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন

উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে চা খেলেন পলাতক আ’সামি।

প্রতিনিধির নাম / ১১৩ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে নাদিম মিয়া (২৫) নামের ছাত্রলীগের এক নেতাকে মারধরসহ তার বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশের মতে সদর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল পলাতক।

কিন্তু বুধবার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হানিফ মুন্সীর কক্ষে বসে অন্যান্য ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল। অথচ পুলিশ তাকে খোঁজেই পাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা জুড়েই চলছে কড়া আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে বেঠকের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী বলেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কিছুক্ষণ পরিষদে নিজ কক্ষে বসে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে একটি চা চক্র করেছি। সেখানে সদর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ইউপি চেয়ারম্যান ছাত্রলীগ নেতা ও তার মাকে মারধরের মামলার পলাতক আসামি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি গত দুই দিন এলাকায় ছিলাম না।

মামলার এজাহার ও ছাত্রলীগ নেতার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে উপজেলায় ছাত্রলীগের এক কর্মী ফেসবুকে একটি শুভেচ্ছা পোস্টার শেয়ার করেন। ওই পোস্টারের ওপরে বড় করে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা এবং নিচে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও দলের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের ছবি ছোট করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশে সদ্য ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করে জয়লাভ করা বিদ্রোহী প্রার্থী আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ছবি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ও সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এরই জের ধরে গত শনিবার বিকেলে উপজেলার যাত্রাপুর বাজার এলাকায় চেয়ারম্যান শফিকুল লোকজন নিয়ে প্রথমে ছাত্রলীগ নেতা নাদিমের ওপর এবং পরে নাদিমের বাড়িতেও হামলা চালান। এঘটনায় গত রোববার রাতে ছাত্রলীগ নেতার বাবা মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামসহ ১৯ জনকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আশুগঞ্জ উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সির কক্ষে বসে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ছাত্রলীগ নেতার মামলার প্রধান পলাতক আসামি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু সায়েম, চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফাইজুর রহমান, শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাফি উদ্দীন চৌধুরী, তারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাদল ছাদির, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাসেল মিয়া, তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলাইমান সেকান্দর।

ছাত্রলীগ নেতা নাদিম মিয়া বলেন, দলের সিনিয়র নেতাদের যথাযথ সম্মান না দিয়ে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া ইউপি চেয়ারম্যানের ছবি সম্বলিত পোস্টার শেয়ার করার ঘটনাটি নিয়ে নিজের ফেসবুকে প্রতিবাদ করি। এর জের ধরে চেয়ারম্যান ও লোকজন হামলা চালিয়ে আমাকে মারধর করে। এখানেই তারা ক্ষান্ত হননি। তারা আমার মাকে মারধর করে আহত করেন। আমার মায়ের হাতের একটি আঙুল ভেঙে গেছে।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজাদ রহমান বলেন, চেয়ারম্যান পলাতক আছে। এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন আসামির জামিন হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান নেই। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সীর কক্ষে পলাতক সদর ইউপি চেয়ারম্যান সভা করেছেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে। বিষয়টি আমরা দেখতেছি।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ