জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।। আর কেউ রইল না অ’লৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শি’শুটির
সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো দুদিন আগেই পৃথিবীর আলো দেখত ময়মনসিংহের ত্রিশালের তপ্ত সড়কে জন্ম নেওয়া শিশুটি। কিন্তু চিকিৎসকের দেওয়া সময় দুদিন পার হলেও শারীরিক অবস্থা জানতে আজ শনিবার (১৬ জুলাই) স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন রত্না বেগম।
সঙ্গে আড়াই বছরের মেয়ে সানজিদাও ছিল। কিন্তু কে জানত ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় রত্নাদের জন্য অপেক্ষা করছে যমদূত!
বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় সড়ক পার হতে গিয়ে স্বামী-সন্তানসহ পিষ্ট হন রত্না বেগম। মুহূর্তেই সড়কে বিলীন হয়ে যায় একটি পরিবার। কিন্তু অলৌকিকভাবে সড়কেই জন্ম নেয় রত্নার গর্ভের সন্তান।
কিন্তু নিজের বলে আর কেউ থাকলো না নবজাতকের।বর্তমানে ময়মনসিংহ সদরের লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির দেখভাল করছেন তার চাচা আরিফ রব্বানী।
ট্রাকের চাপায় পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেলেও শিশুটি প্রাণে বেঁচে গেছে ঠিকই, কিন্তু ডান হাতে আঘাত পেয়েছে সে। ফলে সব হারানোর বেদনা না বুঝলেও শরীরের কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে শিশুটি।
আজ শনিবার (১৬ জুলাই) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় নি’হতরা হলেন- রত্না বেগম (২৬), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) এবং তাদের আড়াই বছরের শিশু সন্তান সানজিদা। তাদের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার রায়মণি এলাকায়।
ঈদের সপ্তম দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রিশালের এই ঘটনা ছাড়াও বগুড়া এবং টাঙ্গাইলের দুর্ঘটনায় একই পরিবারের মোট আটজন মারা গেছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ত্রিশালের এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকে শিশুটির জন্য সমবেদনা জানাচ্ছেন।
নিহত জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফ রব্বানী জানিয়েছেন, রত্না বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার ডেলিভারির তারিখ দুই দিন পার হয়ে যাওয়ায় তিনি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে আসেন।
এরপর সেখান থেকে ফেরার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি ও তার স্বামী-সন্তানের মৃ’ত্যু হয়। তবে এসময় আঘাত পেয়ে সন্তান প্রসব করে ফেলেন রত্না।
এদিকে ওই দুর্ঘটনার পর এগিয়ে আসা প্রতিবেশী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, পেট থেকে বাচ্চা বের হওয়ার খবর পেয়ে আমি সেখানে ছুটে যাই। শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। পরে সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নবজাতকটিকে।
হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার আরিফ আল নূর বলেন, আমরা বাচ্চাটির অবস্থা ভালো পেয়েছি। এক্সরে করার পর ডান হাতের দুটি অংশে ভাঙা দেখা গেছে। তবে বড় ধরনের কোনো আঘাত নেই বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে একমাত্র বেঁচে থাকা এই নবজাতকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন।ময়মনসিংহ জেলার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে বাচ্চাটি কেমন আছে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। তার চিকিৎসাসহ আনুসাঙ্গিক কী প্রয়োজন তা নিয়ে আমরা পাশে থাকবো।’
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল