রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি।। আজ আদালত চত্বরে রিকশা হা’রিয়ে কাঁ’দছেন প্র’তিবন্ধী আলী মোল্লা
এনজিও থেকে ৪৬ হাজার ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা বানিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী আলী মোল্লা (৩৪)। সেই রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন তা দিয়ে চলছিল তার পরিবারের পাঁচজনের সংসার।
গতকাল সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে রিকশা নিয়ে রাজবাড়ী কোর্ট চত্বরে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ শেষ করে বাইরে এসে দেখেন রিকশাটি নেই। এ সময় কোর্ট চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এ ঘটনায় তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ভুক্তভোগী আলী মোল্লা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুই পা খোঁড়া। তিনি রাজবাড়ী পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীকোল রাজারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। সংসারে তার অসুস্থ মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।
জানা গেছে, সোমবার সকালে আলী মোল্লা ব্যক্তিগত কাজে নিজেই রিকশা চালিয়ে রাজবাড়ী আদালতে যান। এ সময় তিনি আদালতের সামনে রিকশাটি রেখে নিচ তলায় মুহুরির সঙ্গে কথা বলে তিনি দোতলায় ওঠেন।
কাজ শেষ করে আধাঘণ্টা পর নিচে নেমে দেখেন তার রিকশাটি নেই। এ সময় তিনি আদালত চত্বর এলাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রিকশাটি খুঁজে পাননি। পরে তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় জিডি করেন।
আলী মোল্লার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, বছরখানেক আগে এনজিও থেকে ৪৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি রিকশাটা বানিয়ে নেন।
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন ভারী কাজ করতে পারেন না। তাই তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রিকশা চালিয়ে দিনে তিনি ৬০০-৭০০ টাকা উপার্জন করেন।
সেই টাকা দিয়ে তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করান। কিন্তু তার একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম রিকশা হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
উপার্জন না করলে কীভাবে সংসার চলবে, কী খাবেন, কীভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেন, ছেলে-মেয়েকে কীভাবে পড়ালেখা করাবেন তা নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়েছেন।
আলী মোল্লা বলেন, ৪৬টা কিস্তির মধ্যে মাত্র ৬টি কিস্তির টাকা দিয়েছি। সপ্তাহে ১৪০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। রিকশা চালিয়ে আমি কিস্তির টাকা পরিশোধ করতাম। আমার রিকশাটি চুরি হয়ে গেছে।
এখন কীভাবে আমি আমার কিস্তির টাকা পরিশোধ করব। কীভাবে সংসার চালাব। আমাকে এখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।রাজবাড়ী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্রাট ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলী মোল্লা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুই পায়ে সমস্যা।
তিনি আমার ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা। তার বাবা নেই। মা, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তার পাঁচজনের সংসার। রিকশা চালিয়ে দিনে যা আয় হতো তা দিয়ে তিনি তার সংসার চালাতেন।
পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। গতকাল আদালত চত্বর এলাকা থেকে তার রিকশাটি চুরি হয়ে গেছে। সমাজের বিত্তশালীদের প্রতিবন্ধী আলীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে রিকশাচালক আলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
ঈদের সামনে একটি চোর চক্র সক্রিয় হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। এই চোর চক্রকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল