জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।। অ’লৌকিকভাবে শি’শুর জ’ন্ম: ট্রা’কচালকের ছিল না লা’ইসেন্স
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না । তবুও মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াতেন ট্রাক নিয়ে। দিনের পর দিন বোপরোয়া গতিতে ট্রাক নিয়ে ছুটে চলাই যেন চালক রাজু আহমেদ ওরফে শিপনের নেশা হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার দিনও ছিলেন বেপরোয়া গতিতে।
আলোচিত ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলাধীন মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চলা ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যু ও অলৌকিকভাবে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিপন ২০০২ সালে যশোরে ট্রাকের চালকের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ঘটনার দিন রাজশাহী থেকে কিশোরগঞ্জ এসেছিলেন তিনি। তবে ফেরার পথে নতুন ভাড়া পেতে ট্রাক নিয়ে ছুটছিলেন বেপরোয়াভাবে।
পরবর্তীকালে বেপরোয়া গতিতে মহাসড়কে ছুটে চলার বলি হয় রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না বেগম ও মেয়ে সানজিদা আকতার। ওই সময় চালক শিপন গতি সামলাতে না পেরে তাদের ট্রাকের চাকায় পিষে দেয়। তবে দুর্ঘটনার পরপর ট্রাক থেকে নেমে স্থানীয়দের ভিড়ের মাঝেই কৌশলে পালিয়ে যায় শিপন।
আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ট্রাকচালক রাজু আহমেদ ওরফে শিপনকে গ্রেফতার করে র্যাব।সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটির সকল কাগজ ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। সেটির বহন ক্ষমতা ৭ টন হলেও ঘটনার সময় সাড়ে ১৩ টন মালামাল (আম, আলু ও পেঁয়াজ) ছিল।
শিপন ছয় থেকে সাত মাস ধরে ট্রাকটি চালিয়ে আসছিল জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে সে এ ধরনের বাহন চালাচ্ছিল। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তার মাঝারি যানবাহন চালানোর জন্য লাইসেন্স ছিল। তবে এরপর থেকে তার কোনো লাইসেন্স ছিল না। অথচ সে ট্রাকটি চালিয়ে আসছিল।
গ্রেফতার শিপন আগে হেলপার ছিল জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০২ সালে ট্রাক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ায় সে ছয় বছর গাড়ি চালাতে পারেনি। এখনও তার বাম পায়ে সেই জখমের চিহ্ন রয়েছে। এই সমস্যা থাকার পরও সে বিভিন্ন ট্রাক চালাচ্ছিল।
শিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার সময় ট্রাকটির ওজন দ্বিগুণ ছিল। ওই সময় সে একটি বাহনকে সাইড দেওয়ার জন্য সড়কের বাম দিকে চাপছিল। একপর্যায়ে সড়কের পাশেই থাকা তিনজনের ওপর সে ট্রাকটি তুলে দেয়। তার দাবি হলো- তখন ট্রাকের ব্রেক কাজ করেনি। এছাড়া গাড়িতে থাকা হেলপার খায়রুল ওই সময় ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল।
গ্রে’ফতার শিপন আরও জানিয়েছে, ২০২২ সাল থেকে গত ১১ জুলাই পর্যন্ত সে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিল। সবশেষ এবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে মালামাল আনলোড করে সে পুনরায় রাজশাহী ফিরে আসে। পরে গত ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে। এরপর রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টায় রওয়ানা দেয়।
পথে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগপর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিল। ফলে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়। সে সময় দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে শিপন ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়ে। পরে বাস থেকে সে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামে এবং সেখান থেকে একটি সিএনজিতে করে প্রথমে মুক্তাগাছা ও পরে অপর একটি বাসে করে সে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে পরিচিত বিভিন্ন ট্রাকচালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকে।
এ ঘটনায় গ্রেফতার রাজু আহমেদ ওরফে শিপনের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
উল্লেখ্য, আলোচিত এ দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন নির্মাণশ্রমিক। দুর্ঘটনায় নিহত কন্যা সন্তান ছাড়াও তাদের পরিবারে আট ও ১০ বছর বয়সী দুইজন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ শিশুর ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের হাড়ে ফ্র্যাকচার ও কলার বোন ভেঙে যায়। বর্তমানে শিশুটি ময়মনসিংহের লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাসরিফ/নরসিংদী জার্নাল