বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

অবশেষে মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজার খুলল

প্রতিনিধির নাম / ১০১ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

ছবি সংগ্রহীত
জনশক্তি রপ্তানি চুক্তিতে দুর্নীতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অবশেষে খুলছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এক বছরে ২ লাখ কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। বেতন হবে ১৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। মাল‌য়ে‌শিয়ায় যাওয়ার খরচ বা অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার কম হ‌বে।

১৭ জানুয়ারি ফিরতি চিঠিতে এজেন্সি সংখ্যা নির্ধারণে আইনি বিধিনিষেধের কথা জানিয়ে জেডব্লিউজি বৈঠকে নিয়োগ পদ্ধতি ঠিক করার প্রস্তাব করেছিলেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার সাড়ে চার মাস পর বৈঠক হতে যাচ্ছে। জিটুজি প্লাসে কর্মীদের ন্যুনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত। 

সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট, নাকি সবাই পাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ- এ নিয়ে ব্যবসায়িক টানাপোড়েনে ছয় মাস আগে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হলেও বাংলাদেশিদের জন্য খোলেনি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

কীভাবে কোন পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে, তা নির্ধারণে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠক।
কর্মী পাঠানোর খরচ পুনর্নির্ধারণ করতে প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। খাতওয়ারি কর্মীদের বেতন কত হবে, তাও নির্ধারিত হয় বৈঠকে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের আমন্ত্রণে বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় আসেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানের।
মালয়েশিয়ার সরকারের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ এবং বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীদের একাংশ ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে চায়। এই ২৫টি এজেন্সি সিন্ডিকেট নামে পরিচিত। জিটুজি প্লাস নামে পরিচিত ২০১৫ সালের চুক্তিতে বাংলাদেশের মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পৌনে তিন লাখ কর্মী নেয় মালয়েশিয়া।

এ পদ্ধতিতে প্রথমে ৩৭ হাজার এবং পরে ১ লাখ ৬০ হাজার কর্মী নেওয়া হয়। অভিবাসন ব্যয় ধরা হলেও কর্মীপ্রতি সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে এজেন্সিগুলো। এতে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে ২০১৮ সালে ক্ষমতায়

ফিরে মাহাথির সরকার জিটুজি প্লাস বাতিল করে। আবারও একই পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশকে রাজি করাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। রাজি না হলে অন্য দেশ থেকে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া- এমন প্রচারণা রয়েছে।

সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দেওয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম ও বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে বিদেশি কর্মীর তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী পায়নি তারা। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে নিয়োগকারীদের চাপ রয়েছে মালয়েশিয়ার সরকারের ওপর। ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন মালয়েশিয়ান মন্ত্রী। এতে বাংলাদেশ রাজি হলে আবারও সিন্ডিকেট হবে।

জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমদ চৌধুরী নোমান সমকালকে বলেছেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ পদ্ধতি অনুমোদন করেনি। তারপরও এ প্রস্তাব বাংলাদেশকে দেওয়া হচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতাও চলছে। সংসদ বিলুপ্ত করতে শিগগির রাজাকে পরামর্শ দেবেন বলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে বর্তমান সরকার কত দিন টিকবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

এ অবস্থায় সিন্ডিকেটের দুর্নীতির অভিযোগদুষ্ট পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলে অতীতের মতোই নতুন সরকার এসে তা বাতিল করতে পারে। ফলে মালয়েশিয়া যেতে যাঁরা টাকা দেবেন, তাঁদের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে। শেষ পর্যন্ত কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে অভিমত বায়রার সাবেক মহাসচিবের। তিনিসহ ১ হাজার ৩০০ রিক্রুটিং এজেন্সির বেশিরভাগের মালিক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
সূত্র সময়কাল

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ