বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অফিসসূচি ৯টা থেকে ৩টা করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক সভায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা না করা, অফিস আদালতে এয়ারকন্ডিশনের টেম্পারেচার ২৫ ডিগ্রি র নিচে রাখা, বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত আটটার মধ্যে শেষ করাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বর্তমান ক্রাইসিস আগামী সেপ্টেম্বরে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সারা দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক সভা শেষে এ কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি। এটা হয়তো সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিবেচনাতেও আসতে পারে। আমরা কোভিডের সময় আমাদের জীবনটাকে অন্যভাবে করেছিলাম। আপনারা জানেন যে কোভিডের সময় কিন্তু উৎপাদনও হয়েছে, ব্যাহত হয়নি। তাহলে আমরা যদি আবার অফিস টাইম সংশোধন বা কিছু কমিয়ে আনতে পারি। পিক আওয়ারের আগে যেমন কোভিডের সময় ছিল। আমরা এটা ৯টা থেকে ৩টা করা যায় কি না বা এক দুই দিন ঘরে বসে কাজ করতে পারি কি না। এটা করলে আমাদের চাহিদাটা কমবে, উৎপাদনশীলতা বজায় থাকবে। করোনাও বাড়ছে সব দিক দিয়ে আমাদের সুবিধা হবে। এতে আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি সংকটের যে প্রক্ষাপট এটা কয়েকবার জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবী আর পড়েনি। যুদ্ধ যেটা ইউক্রেনে হচ্ছে, এটা কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধ না। এটা আমাদের দেশেও একটি ভিন্ন প্রকৃতির যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমাদের উন্নয়নের যে মেরুদণ্ডগুলো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সেটা খুব শক্ত পরীক্ষায় পড়েছে। যে এলএনজি আমরা এক সময় ৫ ডলারেও পেয়েছিলাম, সেটা ৪১ ডলার পর্যন্ত গিয়েছে। শুধু আমরা না পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে যেমন জাপানের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়েও ২০ গুণ বেশি। সেই জাপান এখন লোডশেডিংয়ে আছে।
সকলকে বলে দেয়া হয়েছে আপনাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। তারা হয়তো আরও বড় পদক্ষেপ নিতে পারে। জার্মানি সেখানেও তারা তৈরি হচ্ছে, সাশ্রয়ী হচ্ছে রেশনিংয়ের জন্য। ব্রিটেনে একটি অ্যাপ করে ফেলা হয়েছে যে কোথায় কোথায় রেশনিং হবে সেটা যেন কাস্টমাররা জানতে পারেন। সারা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এই অভিঘাত। আমরা সে তুলনায় ভালো আছি।’
সরকার উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘২০০৯ সালে যেখানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট, সেখানে এখন ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা আছে। বিশ্বে যদি এই অস্থিরতা না হতো আমরা কিন্তু সবাইকে দিতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সহনশীল হয়েছেন। এ কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাবসিডি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ আলোচনা করেছি। নিজেদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি। আলোচনা করেছি কীভাবে আমরা সাশ্রয়ী হতে পারি। যেমন: প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। এর জন্য নিজের ঘরের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে। আমরা যে এসি ব্যবহার করি এর তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির নিচে হবে না। বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে আলোক সজ্জা হয়, এগুলো করা যাবে না। বিয়ের অনুষ্ঠান বা অন্য অনুষ্ঠান যেগুলো রাতে হয়, সেগুলোকে আমরা আলোচনা করেছি যে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সীমাবদ্ধ করার বিষয়ে।’