রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০১ অপরাহ্ন

অনলাইনে জুয়া দুই মাস্টার এজেন্টসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার!

রাব্বি মল্লিক / ১৪৯ বার
আপডেট : বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অনলাইনে জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী বাংলাদেশের দুই মাস্টার এজেন্টসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাকৃতরা হলো মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু, রানা হামিদ ও মো. সুমন মিয়া।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৮-০৩৫১ নম্বর প্লেটের একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ টাকা, ৪টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।

বুধবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মো. তরিকুল ইসলাম বাবু, রানা হামিদ এবং সুমন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে তাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, সম্পদ অর্জন করেছে। তারা মূলত মোবাইল ব্যাংকিং/ ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করে থাকে। এরা www.mazapbu.com ও www.betbuzz365 live ঠিকানার দুইটি বেটিং ওয়েবসাইটের বাংলাদেশের মাস্টার এজেন্ট।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তাররা সাইটগুলোর মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ (নিজস্ব ভার্চুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনে থাকে। পরবর্তীতে লোকাল এজেন্টের কাছে প্রতিটি PBU ১০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তাররা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় লোকাল এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এসব লোকাল এজেন্টে বেটিংয়ে অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি PBU ১৫০ টাকা নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, এসব সাইটগুলোতে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিং এর চইট পরিমানের তিনগুন বা বেটিং এর শর্ত অনুসারে চইট ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং/অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেপ্তার আসামীদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়। এরা ভুয়া ফেসবুক আইডি ও বিদেশি নাম্বারের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে বেটিং সাইডগুলো পরিচালনা করে ও গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। গ্রেপ্তারদের ব্যাংক একাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক একাউন্টগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ খেলার ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া একটা নেশার মতো, এখানে একবার ঢুকলে নিঃস্ব হওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। অংশগ্রহণকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, আইন-শৃঙ্খলার উপর প্রভাব পড়ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে এ সাইটগুলোর ডোমেইন ব্যবহৃত হয়। বিটিআরসি অনেক সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে এগুলো পরিচালনা করছেন। আমাদের পুলিশের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। সকলকে সামাজিকভাবে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে।

অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যারা এখনো এ অনলাইন জুয়ায় জড়িত আছেন আপনারা যদি এ খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় না আসেন তাহলে আপনাদের সকলের পরিণতি এদের মতো হবে। রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তাররা আদালতের মাধ্যমে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ